খানাকুলের সাত সতীনের ঘাটের ছ’টি মন্দির। নিজস্ব চিত্র।
সময়টা ১১৯৬ বঙ্গাব্দ। খানাকুলের কোটরার জমিদার কানাইলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাত স্ত্রীর নিত্যদিনের ঝগড়া মেটাতে নাজেহাল হচ্ছেন। কী করবেন! তাঁদের খুশি করতে জমিদার রত্নাকর নদীর এক খেয়াঘাটের নাম দিয়ে দিলেন ‘সাত সতীনের ঘাট’। পরবর্তী সময়ে মজে যাওয়া নদীটি মূল দ্বারকেশ্বর নদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তা ‘কানা দ্বারকেশ্বর’ নামে পরিচিত হয়। ওই ঘাটের কাছে বর্তমানে রয়ে গিয়েছে নালার মতো কানা দ্বারকেশ্বরের এক টুকরো অস্তিত্ব। কিন্তু খানাকুলে ‘সাত সতীনের ঘাট’ এখনও রয়ে গিয়েছে।
ঘাটটির অবস্থান কোটরা এবং রাধানগর গ্রামের সীমানায়। ঘাটের পাশে একটি পুকুরের ধারে পর পর ছ’টি ভগ্নপ্রায় শিবমন্দির রয়েছে। আরও একটি ছিল জমিদারের বাড়ির পাশের পুকুরের পাড়ে। এখন আর নেই। শিবমন্দিরগুলিও ওই জমিদারেরই বানানোর। প্রথম যে মন্দিরটি পুকুরের পাড়ে তিনি নির্মাণ করেন, সেটি ছিল তাঁর বড় বউয়ের জন্য। বাকিরা ছাড়বেন কেন? তাঁরা জমিদারের কাছে তাঁদের জন্যেও শিবমন্দির বানিয়ে দেওয়ার বায়না করলেন। কানাইলাল আর যাবেন কোথায়!
‘সাত সতীনের ঘাটে’র পাশে হল আরও ছ’টি শিবমন্দির। শুধু স্ত্রীদের বায়না মেটানোর নির্দশন হিসেবে নয়, শিল্পকর্ম হিসেবেও মন্দিরগুলি দেখার মতো। রয়েছে পোড়ামাটির কাজ। বয়সের ভারে জীর্ণ হলেও আভিজাত্যের স্মৃতি বহন করছে। মন্দিরগুলি সব একই আকারের। প্রত্যেকটির মধ্যেই একটি করে শিবলিঙ্গ ছিল। প্রতিটি মন্দিরের দু’পাশের দেওয়ালে একেবারে সমান্তরালে একটি করে ফুটো ছিল। সেই ফুটো দিয়ে এক পাশ থেকে দেখলে সব মন্দিরের শিবলিঙ্গের মাথাগুলি একসঙ্গে দেখা যেত। বর্তমানে অবশ্য শিবলিঙ্গগুলিচুরি হয়ে গিয়েছে। মন্দিরগুলিও কিছুটা বেঁকেচুরে গিয়েছে।অনাদরে, অবহেলায় নষ্ট হচ্ছেএই সুন্দর নির্মাণ।
।