এই ফলকই ভরসা শবযাত্রীদের।
কোনও পুরোহিত মিলছে না মাহেশের লক্ষ্মীঘাট শ্মশানে। মৃতদেহ দাহের আগে পারলৌকিক কাজের জন্য শবযাত্রীরা তাঁর খোঁজ করলেই ডোম দেখিয়ে দিচ্ছেন শ্মশানের ফলক। সেটা দেখে নিজেদেরই মন্ত্র পড়তে হচ্ছে শবযাত্রীদের!
বেশ কিছু দিন ধরে ওই শ্মশানে এমনই পরিষেবার হাল। অনেক ক্ষেত্রে দাহকাজে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। রীতি বা প্রথা মেনে প্রিয়জনের দেহ সৎকারে কেন বাধা হবে পুরসভার পরিকাঠামো, এই প্রশ্ন উঠছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারা। পদক্ষেপেরও আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘পরিকাঠামো এবং বেশি টাকা নেওয়ার অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। সুষ্ঠু ভাবে যাতে মানুষ পরিষেবা পান, সে জন্য তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। পুরোহিতের না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এই বিষয়টিও আমরা দেখছি।’’ এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘যত দূর জানি, কাঠের চুল্লিতে দাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দর বেঁধে দেওয়া নেই। অনেক ক্ষেত্রেই শ্মশানকর্মীরা বেশি টাকা চান, দর-কষাকষি করেন। নির্দিষ্ট নিয়ম করা দরকার।’’
দেহ সৎকারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুরবাসীর সমস্যার এটাই অবশ্য শেষ নয়। এই শহরে তিনটি শ্মশান। এর মধ্যে চাতরার কালীবাবুর শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। জুলাই মাসের শেষে ওই শ্মশান লাগোয়া জায়গা গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়ে। বর্তমানে শ্মশানটি ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে গত পয়লা জুলাই থেকে পুরসভা অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্মশান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় প্রশাসন, সেচ দফতর, পুরসভা— সব দফতরের তরফেই জানানো হয়েছিল, ভাঙনের জায়গাটি শীঘ্রই মেরামত করা হবে, যাতে শ্মশানটি দ্রুত চালু করা যায়। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ হয়নি। শ্মশানটি এখনও বন্ধই। বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকায় এই শ্মশানেই অপেক্ষাকৃত বেশি দেহ দাহ হয়। শ্রীরামপুর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মরদেহ আসে।
আর একটি শ্মশান রয়েছে বল্লভপুরে। এখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি হচ্ছে। অভিযোগ, এই কাজ শেষ করতে দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক চুল্লি এখনও চালু করা যায়নি। লক্ষ্মীঘাটের মতোই এখানেও কাঠের চুল্লিতেই দাহ করা হয়।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্প্রতি কালীবাবুর শ্মশানঘাট পরিদর্শন করা হয়েছে। মেরামতির কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বল্লভপুর শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বাকি। এ জন্য সিইএসসি-কে ৩২ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। রাজ্য সরকার ওই টাকা পাঠালেই বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু হয়ে যাবে। পরিস্থিতির জেরে বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য এই শহরের লোকজনকে এখন পাশের বৈদ্যবাটী অথবা রিষ়ড়া শ্মশানে যেতে হচ্ছে।