Pregnant Woman death

সিজ়ারের পরে জটিলতার কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি

প্রসূতিদের একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়া ও এক জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ভাবে কিছু তথ্য সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য দফতরও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ, সুদীপ দাস

কলকাতা, চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৯:০১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে সিজ়ারের পরে পাঁচ প্রসূতির গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর ঘটনার নেপথ্যের আসল কারণ জানতে কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের তিন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ, শনিবার সেই কমিটির সদস্যেরা হুগলির ওই হাসপাতালে গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখবেন।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই সমস্ত কিছু স্পষ্ট করে বলা সম্ভব।’’

সূত্রের খবর, প্রসূতিদের একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়া ও এক জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ভাবে কিছু তথ্য সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য দফতরও। স্বাস্থ্য দফতর খতিয়ে দেখতে চাইছে, কোন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক ওই অস্ত্রোপচারগুলির দায়িত্বে ছিলেন? আদৌ কি তিনি সব ক’টিতে ছিলেন, না জুনিয়র ডাক্তাররাই মূলত সিজ়ারগুলি করছিলেন? পাশাপাশি ওই প্রসূতিদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, স্যালাইন ও যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

গত সোমবার ইমামবাড়া হাসপাতালে ওই পাঁচ মহিলার সিজ়ার হয়। এর পরেই প্রত্যেকের অবস্থার অবনতি হয়। রাতে সকলকে সিসিইউ-তে সরানো হয়। মঙ্গলবার দু’জনকে আর জি কর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। বুধবার রাতে সেখানেই নৈহাটির বাসিন্দা, ১৮ বছর ৩ মাসের অঞ্জলি মণ্ডল মারা যান। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, লিভার বেড়ে যাওয়া, কিডনি আক্রান্ত হওয়া এবং রক্ত জমাট
বেঁধে যাওয়াকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লেখা হয়েছে। অঞ্জলির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর বলেন, ‘‘শুনেছি ফ্যাটি লিভারজনিত সমস্যা ছিল। পাশাপাশি, অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল। মৃত্যুর জন্য সেটাও একটা কারণ
হতে পারে।’’

এ দিকে, ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে বৃহ্পতিবার আরও দু’জনকে কলকাতায় (এক জনকে এসএসকেএম, অন্য জনকে কলকাতা মেডিক্যালে) পাঠানো হয়। গোলাফসা খাতুনের চিকিৎসা চলছে ইমামবাড়া হাসপাতালেই। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসায় সাড়া দেওয়ার
ইঙ্গিত মিলছে। ওই প্রসূতির স্বামী নিসার আলি শুক্রবার দুপুরে জানান, স্ত্রী কথা বলছেন। স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতালের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে। এ দিন গোলাফসার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও জানিয়েছেন। হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গোলাফসার চিকিৎসা চলছে। কারণ খুঁজতে সরকারের কাছে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি মেনেই কলকাতার হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে শয্যা ফাঁকা থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে জীবনদায়ী ব্যবস্থা রয়েছে, এমন অ্যাম্বুল্যান্সে প্রসূতিদের স্থানান্তর করা হয়। সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীও পাঠানো হয়।

প্রসূতিদের কিডনি আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকদের অনেকের ধারণা, অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানাস্থেসিয়া বা অজ্ঞান করার ওষুধের পরিমাণের হেরফের, ইন্ট্রা অ্যাবডোমিনাল প্রেসার (তলপেটের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যাওয়া), মূত্রথলি থেকে রক্তে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ, এই তিনটি কারণের যে কোনও একটি হতে পারে।

এ দিকে, শুক্রবার ভোরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মৃতার নাম নিবেদিতা বিশ্বাস (৩৩)। বাড়ি শ্রীরামপুরের এম জি রোডে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সিজ়ার করে তাঁর সন্তান হয়। তার পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রক্তচাপও বেশি ছিল। রক্ত দেওয়া
হয়। তবে বাঁচানো যায়নি। এটি তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তানও সিজ়ার করে হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement