brick kiln

Brick Kiln: ইট তৈরিতে মাটিই ভরসা, ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার নামে

এ রাজ্যে গঙ্গা-সহ বিভিন্ন নদীর পাড়ের ইটভাটায় পলিতেই ইট হয়। বাকি জায়গায় ইটভাটার কাঁচামালের উৎস কৃষিজমির মাটি।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৫২
Share:

ফ্লাই অ্যাশের ইট। পান্ডুয়ার খন্যানে। ছবি: সুশান্ত সরকার

কেন্দ্রীয় পরিবেশ আইন বলছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩০% ফ্লাই অ্যাশ ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ইট তৈরিতে মাটি ব্যবহার করা যাবে না। ফ্লাই অ্যাশ দিয়েই করতে হবে। পরিবেশকর্মীরাও মনে করেন, ইট তৈরিতে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। তাতে কৃষিজমি বাঁচবে। ফ্লাই অ্যাশের সঠিক ব্যবহার হবে। পরিবেশের পক্ষে সহায়ক হবে এই ব্যবস্থা। মাটির ইটের থেকে গুণমানে এই ইট ভাল এবং দামেও কম। কিন্তু শোনার লোক কই! এ রাজ্যের ইটভাটাগুলি মাটিকেই আঁকড়ে ধরে রয়েছে।

Advertisement

এ রাজ্যে গঙ্গা-সহ বিভিন্ন নদীর পাড়ের ইটভাটায় পলিতেই ইট হয়। বাকি জায়গায় ইটভাটার কাঁচামালের উৎস কৃষিজমির মাটি। হুগলি জেলার ইটভাটা মালিকদের একটি সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সাত হাজার ইটভাটা রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ইটভাটায় নদীর পলিমাটিতে ইট তৈরি হয়। বাকিরা কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করে। সরকার ফ্ল্যাই অ্যাশ থেকে ইট তৈরির প্রস্তাব কখনও দেয়নি।’’

অথচ, বাম আমলে, ২০০৮ সালে এ রাজ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আওতায় ফ্লাই অ্যাশ ব্যবস্থাপনা কমিটি তৈরি হয়েছিল। ফ্ল্যাই অ্যাশের সঠিক ব্যবহার নিয়ে কমিটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। ফ্লাই অ্যাশের ইট জনপ্রিয় করতেও তারা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকার ওই ইট তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। সরকারি নির্মাণে ওই ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। রাজ্যে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে।

Advertisement

রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১.৫ মিটার অর্থাৎ প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত মাটি কাটা হলে তা খনিশিল্পের আওতায় পড়বে না। পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্রও জরুরি নয়। এতে প্রমাদ গুনছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কা, ওই সিদ্ধান্ত আইনে পরিণত হলে কৃষিজমির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাঁদের দাবি, ফ্লাই অ্যাশ দিয়ে ইট তৈরি করা হলে সব সঙ্কট মিটবে। পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে। সেখানকার ফ্লাই অ্যাশে দূষণের অভিযোগ ওঠে। সরকার উদ্যোগী হলে ওই ফ্লাই অ্যাশ ইটভাটায় ব্যবহার করা যেতে পারে। পড়শি রাজ্য ওড়িশায় ফ্লাই অ্যাশ ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কৃষিজমি রক্ষায় ফ্ল্যাই অ্যাশের ব্যবহার গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। এই ইট স্যাঁতসেঁতে হয় না। ইটভাটাগুলি খরচ করে মাটি কেনে। ফ্লাই অ্যাশ কেনায় তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ হুগলি জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কৃষিজমির মাটি কাটার সমস্যা কমেছে। আমরা সতর্ক। তবে, রাজ্য সরকার ফ্ল্যাই অ্যাশ থেকে ইট তৈরির সিদ্ধান্ত নিলে কাঁচামালের অভাব হবে না। ব্যান্ডেল থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (বিটিপিএস) ফ্ল্যাই অ্যাশেই জেলার ৪২৮টি ইটভাটায় ইট তৈরি সম্ভব। ইটের দামও কম হবে। পরিবেশবিদেরা যখন বলছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবব।’’

খন্যানের ফ্লাই অ্যাশের ইট কারবারি মকবুল করিম বলেন, ‘‘এক হাজার মাটির ইটের দাম ১০-১২ হাজার টাকা। আমাদের এখানে একই সংখ্যক ইটের দাম সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এই ইটে স্যাঁতসেঁতে ভাব আসে না। পরিবেশবান্ধব। এর ব্যবহার বাড়াতে সরকার উদ্যোগী হলে মানুষের ভরসা বাড়বে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement