—প্রতীকী চিত্র।
এক তৃণমূল নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার ঘটনাকে ঘিরে তারকেশ্বরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল আবারও বেআব্রু হল। ঘটনায় জড়িয়েছে বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়ের নামও। রবিবার রাতে পিয়াসারা বাজারের ওই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত।
পুলিশ জানায়, ধৃত মুন্সি সেকান্দর, মুন্সি আজিজুল এবং শেখ মহিউদ্দিন মির্জা তারকেশ্বরের পিয়াসারার বাসিন্দা। তাদের সোমবার চন্দননগর আদালতে পেশ করা হয়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নে পোস্টার পড়ে পিয়াসারায়।
কিন্তু রবিবার রাতে পিয়াসারা বাজারে চা খেতে গিয়ে কেন আক্রান্ত হলেন সইদুল মোল্লা নামে ওই তৃণমূল নেতা?
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের সঞ্চালক সইদুলের সঙ্গে দলেরই এক ব্যবসায়ী-নেতার বিরোধ চলছিল। মূলত, একটি খাসজমির বণ্টন নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। পাট্টা দেওয়া সেই জমি ইতিমধ্যে হাতবদল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার রাতে সে কারণেই সইদুল আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। তারপরে এলাকায় দু’পক্ষের বোমাবাজিও হয়। এরপরে একদল তৃণমূল কর্মী সেখানে নতুন তৈরি হওয়া দলীয় কার্যালয়ের ‘দখল’ নিতে গেলেও গোলমাল হয়। একজন আক্রান্ত হন। কয়েকজনের দাবি, এ ক্ষেত্রে গুলিও চলে। পুলিশ তা মানেনি। সইদুল এবং জখম তৃণমূল কর্মীকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সইদুল আগেই অভিযোগে জানিয়েছিলেন, ওই ব্যবসায়ী-নেতাই দলে নতুন গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। তারাই নতুন দলীয় কার্যালয়ে থাকে। তারাই হামলা করে। নাইটা মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সরকারি জায়গা ওই ব্যবসায়ী-নেতা দখল করে রেখেছেন। সইদুল এর বিরোধীতা করছেন। সেই কারণে ওঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয়। কিছুদিন ধরেই গোলমাল চলছে। পুলিশ, বিধায়ক, ভূমি দফতর— সর্বত্রই বলেছি। কাজ হয়নি। বিধায়কের মদতেই ব্যবসায়ী-নেতার এত বাড়বাড়ন্ত। পুলিশও মদত দিচ্ছে। সরকারি জমি সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা উদ্ধার করব।’’
ওই ব্যবসায়ী-নেতার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়ের দাবি, ‘‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। কে কোথায় জমি দখল করে রেখেছে তা দেখার জন্য ভূমি দফতর, প্রশাসন রয়েছে। যে খাসজমির কথা বলা হচ্ছে। তা বাম আমলে পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। তার একাংশ অবশ্য সরকারের হাতেই আছে। পাট্টাপ্রাপকরা বেআইনি ভাবে জমি বিক্রি করছেন। মারধর জমির কারণেই কি না, তদন্ত হোক।’’ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘সরকারি জমি দখল বা পাট্টা পাওয়া জমি বিক্রি করা যায় না। পুলিশ আর ভূমি দফতর ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’’
তৃণমূলের অন্দরের এই কাজিয়ায় সরব বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে অশান্তি। এতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূল বিপর্যস্ত। দল সামলাতে পারছে না। ডাকাত দলের ডাকাতির পরে এই পরিণতি হয়।’’