আক্রান্ত প্রীতম পারাল। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
খেলা নিয়ে গোলমালের জেরে এক যুবককে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর এবং তার পরে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল তাঁরই তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে। রবিবার বেশি রাতে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার জগাছা থানা এলাকার কামারডাঙায়। রাস্তার ধার থেকে সঙ্কটজনক অবস্থায় প্রীতম পারাল নামে ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্তের পরে গুলি চলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, কম করে দু’রাউন্ড গুলি চলেছে। কিন্তু, দু’টিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার পরেই ওই যুবকের তিন বন্ধু গা-ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে প্রীতমের সঙ্গে গোলমাল বাধে কামারডাঙার বাসিন্দা প্রতীক দে, তাতাই ও সোনু নামে তাঁরই তিন বন্ধুর। তখনকার মতো ঝগড়া-গোলমাল মিটে যাওয়ার পরে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ প্রীতমকে ফোন করে কামারডাঙার অরবিন্দ রোডে ডেকে পাঠায় প্রতীক। নিজের মোটরবাইক নিয়ে মত্ত অবস্থায় রাত ১০টার পরে সেখানে আসেন প্রীতম।
দু’-একটা কথার পরেই তিন জন মিলে বেধড়ক মারতে শুরু করে প্রীতমকে। প্রীতমের মাথা ফেটে যায়। তিনি জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ওই সময়ে এক জন আগ্নেয়াস্ত্র বার করে প্রীতমকে লক্ষ্য করে পর পর দু’রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। যদিও গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রীতম মারা গেছেন ভেবে তিন বন্ধু পালিয়ে যায়। গুলির আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁরাই খবর দিলে পুলিশ এসে প্রীতমকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
সোমবার অরবিন্দ রোডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা ঘর থেকে দু’বার গুলির আওয়াজ শুনেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, কেউ পটকা ফাটাচ্ছে। রাস্তায় বেরিয়ে দেখি, একটি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমরাই পুলিশকে ডেকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।’’ এ দিনও ওই যুবক হাওড়া হাসপাতালের আইসিইউতে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অরবিন্দ রোডে যেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রীতমকে উদ্ধার করা হয়, সেখান থেকে কিছুটা দূরে তাঁর মোটরবাইকটি পড়ে ছিল। পুলিশ বাইকটি বাজেয়াপ্ত করেছে।
এ দিনই জগাছা থানার পক্ষ থেকে প্রীতমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করা হয়, রবিবার রাতে কে বা কারা, কী কারণে তাঁকে মারধর করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের বাড়ি আমতায়। তবে তিনি জগাছায় মামার বাড়িতে থাকেন।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আহত যুবক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, মদ খেয়ে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। গুলি চলার প্রমাণ এখনও আমরা পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’ জগাছা থানার পুলিশের পাশাপাশি হাওড়া গোয়েন্দা দফতরও ঘটনার তদন্তে নেমেছে।