(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
অক্টোবর ২০২১: মহালয়ার ঠিক পরের ঘটনা। বৃষ্টিতে জল জমেছিল হাওড়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বি রোড এলাকায়। সেই জল সরাতে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করছে না, এই অভিযোগ তুলে হাওড়া পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়ে চেয়ারের উপর হাফ প্যান্ট এবং টিশার্ট পরে রাস্তায় বসে পড়েছিলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। তার পর স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ছবি দেখে দূত মারফত গৌতমের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যার মূল কথা ছিল, ‘দিদি রেগে গিয়েছেন’।
অক্টোবর ২০২৪: গত ছ’বছর ধরে ভোট বকেয়া হাওড়ায়। ‘অভিভাবকহীন’ হাওড়া শহরের পাড়ায় পাড়ায় আবর্জনার পাহাড় জমেছে। সে সব ঠিক মতো পরিষ্কারও হচ্ছে না। শুক্রবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ তো করেইছেন। পাশাপাশি বলেছেন, তিনি নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন, হাওড়ার কনজ়ারভেন্সির (ময়লা পরিষ্কার) দায়িত্ব যাতে গৌতম চৌধুরীকে দেওয়া হয়।
তিন বছরের মধ্যেই হাওড়ার রাজনীতিতে গৌতমের ওজন বদলে গেল। সে দিন যিনি গৌতমকে বকুনি দিয়েছিলেন, শুক্রবার সেই মমতাই গৌতমকে গুরুত্ব দেওয়ার বার্তা দিলেন। যা তৃণমূলের অভ্যন্তরেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। শুক্রবার ‘ডেনা’ সংক্রান্ত প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই হাওড়ার প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ায় কনজ়ারভেন্সির কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। আমি ববিকে বলেছি, গৌতমকে দায়িত্ব দিতে। ও এই কাজগুলো চটপট করবে।’’ হাওড়া পুরসভায় এখন প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন চিকিৎসক সুজয় চক্রবর্তী। দলশ্রুতি: সুজয়কে মমতা ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করলেও তাঁর প্রশাসনিক কাজে মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা ‘সন্তুষ্ট’ নন। যেমন, শুক্রবার সুজয়ের নাম উল্লেখ না করে মমতা বলেছেন, ‘‘ওখানে যিনি সভাপতি আছেন, তিনি নিজে ডাক্তার। মানুষ ভাল। কিন্তু এই কাজটা দাঁড়িয়ে করাতে হবে। তাই গৌতমকে দায়িত্ব দিচ্ছি।’’
তিন বছর আগের পুরনো কথা নিয়ে গৌতম শুক্রবার কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁকে এখন যে দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, তা সঠিক ভাবে পালন করার জন্য পরিকল্পনাও প্রস্তুত করে ফেলেছেন। গৌতমের কথায়, ‘‘দিদি যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করতে যা করতে হয়, তা-ই করব।’’ হাওড়া পুরসভায় ২০১৩-১৮ সাল পর্যন্ত গৌতমই ছিলেন কনজ়ারভেন্সির মেয়র পারিষদ। তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তা ছাড়া গোটা হাওড়া শহরকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। গৌতম বলেন, ‘‘বড় রাস্তায় যত ভ্যাট রয়েছে, সেগুলি আগে সরাতে হবে। সমস্ত ওয়ার্ডের জন্য পৃথক পৃথক পরিকল্পনা করেই আমি এগোতে চাই।’’ পাশাপাশি উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক জানিয়েছেন, তিনি একা নন। ‘টিম’ হিসাবেই কাজ করে হাওড়া শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে চান তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটলেই তিনি যাবেন বেলগাছিয়া ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ পরিদর্শনে।
হাওড়া কর্পোরেশনের সঙ্গে বালি পুরসভাকে সংযুক্ত করেছিল মমতার সরকার। তার পর ফের হাওড়া থেকে বালিকে পৃথক করার বিল পাশ করানো হয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু সেই বিল দীর্ঘ দিন ধরে রাজভবনে পড়ে রয়েছে। জগদীপ ধনখড় যখন রাজ্যপাল ছিলেন, তখন থেকেই হাওড়া-বালি পৃথকীকরণের বিল রাজভবনে পড়ে রয়েছে। ফলে হাওড়ায় ভোট হয়নি। সাধারণত ময়লা পরিষ্কারের কাজ তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং তাঁর বাহিনী। হাওড়ায় ভোট না হওয়ার ফলে কোনও ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই। যা কনজারভেন্সির কাজ না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তৃণমূলের অনেক নেতা। হাওড়া শহরের মধ্যেই এখন রাজ্য প্রশাসনের সচিবালয় নবান্ন। সেই শহরকে পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব মমতা সঁপে দিলেন গৌতমকে। তিন বছর আগে অক্টোবরে তিরস্কৃত হয়েছিলেন। এই অক্টোবরে দায়িত্ব পেলেন গৌতম।