Jiban Krishna Saha

সম্পন্ন পরিবারের সাধারণ ছেলে জীবন কী ভাবে জড়িয়ে পড়লেন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে?

সোমবার ভোট সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। ২০০৪ সালে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান জীবন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তার পর থেকেই বদলাতে শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১১
Share:

বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। ফাইল চিত্র।

বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই অভিযানের খবর দেখে রঘুনাথগঞ্জে এক চিকিৎসকের চেম্বারে এক প্রৌঢ়ের মুখে হাসি আর ধরছে না। বলেই ফেললেন, ‘‘আমার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে লোকটা, চাকরি দেয়নি। টাকাও ফেরত পাইনি। বিধায়ক বলে কিছু বলতেও পারছিলাম না। ওর সাজা হোক।’’ একটি সম্পন্ন পরিবারের সাধারণ ছেলে এমন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লেন কী করে? অনেকেরই দাবি, ‘কেষ্ট সঙ্গেই তাঁর লক্ষ্মীলাভ’। ‘কেষ্ট’ অর্থাৎ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের ঘনিষ্ঠতা ২০১২-১৩ সাল থেকে তৈরি হয় বলেই দাবি।

Advertisement

জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতারির পর আর কোনও ‘প্রভাবশালী’র নাম কি প্রকাশ্যে আসবে?

ফলাফল দেখুন

সেই সময় থেকেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জীবনকৃষ্ণ টাকা তুলতে শুরু করেন বলেও অভিযোগ। চাকরি নেই তাই বেআইনি ভাবে চাকরিই সই, এই যুক্তি থেকে সম্পন্ন পরিবারের ছেলে জীবনকৃষ্ণের ভদ্র ব্যবহারে বিশ্বাস করে বহু লোক তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এ কথাও স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই জানতেন, জীবনকৃষ্ণের জীবন গোড়ার দিকে সহজ ছিল না। পারিবারিক অশান্তির জের অনেক দিন ভুগিয়েছে তাঁকে। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বড়ঞার বাসিন্দা সাতকড়ি সাহার তিন ছেলের মধ্যে বিশ্বনাথের ছেলে জীবনকৃষ্ণ। যৌথ পরিবারে ব্যবসা নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। এক সময় জীবনকৃষ্ণের মা বেলারানি বাপের বাড়ি চলে যান। জীবনকৃষ্ণ আন্দির বাড়িতে ঠাকুমার কাছে থাকলেও তাঁর দু’বোন বড় হন পাশের গ্রাম হেতিয়ায়। বিশ্বনাথ আবার বিয়ে করেন। বিশ্বনাথ সাঁইথিয়ারই বাসিন্দা। পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে দাবি, বিশ্বনাথেরও প্রচুর সম্পত্তি আছে সাঁইথিয়া ও মুর্শিদাবাদে। তবে ছেলের সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর।

২০০৪ সালে জীবনকৃষ্ণ প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তার পর থেকেই জীবনকৃষ্ণ বদলে যেতে শুরু করেন। অভিযোগ, তারও কয়েক বছর পরে নানুরের একটি স্কুলে শিক্ষকের কাজে যোগ দিয়ে ২০১২-২০১৩ সাল নাগাদ অনুব্রত মণ্ডলের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জীবনকৃষ্ণ। অনুব্রতের বাড়িতেও তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি। শাসক শিবিরে যোগ দেওয়ার এক দশক পরে বড়ঞা কেন্দ্রে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়ে জেতেন। তখনই তাঁর সম্পত্তি অনেক। বিধায়ক হওয়ার পরে যা আরও দ্রুত বাড়তে থাকে বলে দাবি।

Advertisement

বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সাঁইথিয়ায় একটি চালকল, দু’টি হিমঘর, সাঁইথিয়া এলাকায় একটি বাড়ি ছাড়াও সাঁইথিয়া থানার অন্তর্গত লাউটরি মৌজায় প্রায় ২০-২২ কাঠা জমি রয়েছে জীবনকৃষ্ণের। এ ছাড়াও সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকায় একাধিক জায়গায় তাঁর জমি রয়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গিয়েছে। সেই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় চার-পাঁচ কোটি টাকা। শুধু সাঁইথিয়াতেই নয়, বোলপুরের তাতারপুর, বাঁধগোড়া, তালতোড় মৌজা মিলিয়ে তাঁর প্রায় ২১৫.৪৭ শতক অর্থাৎ ১৩০ কাঠার বেশি জমি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটির উপর। সরকারি নথি অনুযায়ী, জীবনের নামে এই সমস্ত জমি রেকর্ড হয়েছে ২০১৩-২০২২ সালের মধ্যে। জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী টগরের নামেও আন্দি বাজার এলাকায় জমি ও বাড়ি আছে। যার বর্তমান মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement