ভাগাড় থেকে উদ্ধার মানবভ্রূণ! নিজস্ব চিত্র।
পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। হাওড়ার উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাগাড়ে (ডাম্পিং গ্রাউন্ড) ১৭টি মৃত মানবভ্রূণ কোথা থেকে এল, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল না বুধবারও। উল্টে, এ দিন সকালেই শহরের একটি নার্সিংহোমের সামনের ভ্যাট থেকে কাপড়ে জড়ানো আরও একটি মৃত মানবভ্রূণ উদ্ধার করেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। পুরকর্তাদের একাংশ জানান, অনুমান করা হচ্ছে ওই নার্সিংহোম থেকেই ভ্রূণটি ভ্যাটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সতর্ককরা হয়েছে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ভাগাড় থেকে উদ্ধার হওয়া ভ্রূণগুলির এ দিন উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে তদন্তের গতি আরও বাড়ানো হবে। কোথা থেকে ভ্রূণগুলি এল, সে বিষয়ে খোঁজখবর চলছে। ঘটনার পিছনে কোনও দালাল-চক্র রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
উলুবেড়িয়ার বাণীতবলায় পাঁচিলেঘেরা ওই ভাগাড় থেকে প্রতিদিন সকালে ময়লা ঘেঁটে জিনিস তুলে বিক্রি করে সংলগ্ন বস্তির কিছু কিশোর। ভাগাড়ের গেট সবসময় খোলাই থাকে। মঙ্গলবার সকালে সেখানেই প্লাস্টিকের জারে মৃত ভ্রূণগুলি প্রথম দেখে কিশোররা চিৎকার করলে সাড়া পড়ে এলাকায়।
ঘটনার তদন্তে মঙ্গলবারই চার সদস্যের কমিটি গড়েছিল পুরসভা। বুধবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আরও একটি চার সদস্যের কমিটি গড়ে দেন। দু’টি কমিটির সদস্যেরাই যৌথ ভাবে এ দিন মোট চারটি নার্সিংহোমপরিদর্শন করেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দু’টি কারণে নার্সিংহোম পরিদর্শন শুরু হয়েছে। ভাগাড়ের ভ্রূণ ফেলার ঘটনায় কোনও নার্সিংহোমের কোনও যোগ রয়েছে কি না এবং নার্সিংহোমের ক্লিনিক্যাল (চিকিৎসা সংক্রান্ত) বর্জ্য সরিয়ে ফেলার কী ব্যবস্থা আছে, তা খতিয়ে দেখা। হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা আছে। তাদের সঙ্গে নার্সিংহোম-হাসপাতালকে চুক্তি করতে হয়। সেই চুক্তি না দাখিল করলে কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের লাইসেন্স নবীকরণ হয় না।
উলুবেড়িয়ায় মোট ৩৯টি নার্সিংহোম আছে। সবগুলিতেই পরিদর্শন হবে জানিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাগাড়ে নার্সিংহোম বা হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলার কথা নয়। ১৭টি ভ্রূণ উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের নার্সিংহোম এবং হাসপাতালগুলিতে সেই ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, সেটাই সরেজমিন পরিদর্শন করা হচ্ছে।’’
পুরসভার গড়া কমিটিতে আছেন চেয়ারম্যান অভয় দাস এবং ভাইস-চেয়ারম্যান ইনামুর রহমান। অভয় জানান, এ দিন একটি নার্সিংহোমের কাগজপত্রে কিছু গরমিল ধরা পড়েছে। বিষয়টি পুরসভার পক্ষ থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে লিখিত ভাবেজানানো হবে।
পুরসভা জানিয়েছে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নার্সিংহোম এবং হাসপাতালের সামনে রাস্তায় রাখা ভ্যাট তুলে নেওয়া হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল নয়, এমন বর্জ্য পুরসভার সাফাইকর্মীরাই ওই ভ্যাট থেকে তুলে ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে আসেন। ভ্যাটগুলি তুলে নেওয়ার পরে নার্সিংহোম-হাসপাতালে বাক্স দেওয়া হবে। সেখানেই ক্লিনিক্যাল নয়, এমন পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলতে হবে। সাফাইকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ভাগাড়ে তিনশিফটের জন্য নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে। বাড়ানো হবে সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও।
পুরপ্রধান জানান, ভ্যাটে ক্লিনিক্যাল নয়, এমন বর্জ্যের সঙ্গে কেউ প্যাকেটে করে ভ্রূণও ফেলে আসতে পারেন। সেটা যাতে না হয়, সে জন্যই ভ্যাট তুলে দেওয়া হবে। নার্সিংহোম থেকেও যখন সরাসরি পুরসভার সাফাইকর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করবেন, তাঁদের প্যাকেট খুলে দেখে নিতে বলা হয়েছে।