প্রাক্তন খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। — ফাইল ছবি।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার বহু চাল এবং আটাকলে রেশন দুর্নীতির সিন্ডিকেট চলেছে বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল ইডির। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তদন্তকারীরা তখনই দাবি করেছিলেন, এই সিন্ডিকেটের অন্যতম চাঁই ছিলেন ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। এ বার সেই সম্পর্কিত একাধিক তথ্য উঠে আসছে ইডির জমা করা নথিতে। যে নথি দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
রেশন দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিক কত টাকা এ দিক-ও দিক হয়েছে? তার একটি স্পষ্ট হিসাব রয়েছে ইডির নথিতে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর— এই ২২ মাসের সময়কালে বাকিবুরের ‘মেসার্স এনপিজি রাইস মিল প্রাইভেট লিমিটেড’ একাই তার ডিস্ট্রিবিউটর বা সরবরাহকারীদের কাছে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৫০০ কুইন্টালেরও বেশি আটা (১,৪২,৫০০.৯৯৯৫ কুইন্টাল) কম সরবরাহ করেছে। যা মোট নির্ধারিত পরিমাণের ২৫.৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ, যত আটা সরবরাহ করার কথা, তার চার ভাগের এক ভাগ আটা সরবরাহই করা হয়নি। অথচ, সেই বাবদ টাকা কিন্তু সরকার দিয়েছে। ইডির তদন্তে উঠে এসেছে যে, বাকিবুর চাল এবং আটার দুর্নীতির মাধ্যমে নগদে ৯০০ কোটিরও বেশি অর্থ কামিয়েছেন। যে দুর্নীতিলব্ধ অর্থের একটি অংশ তিনি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন খাদ্য এবং সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে।
ইডির প্রাথমিক তদন্তেই উঠে এসেছিল যে, চালের মতো একই ভাবে নিম্নমানের গম কিনে যে আটা তৈরি হত, তা সরকারের কাছে যেত। ভাল গমের আটা (যা আদতে সরকারের প্রাপ্য) তা চলে যেত অন্যত্র। এ ভাবে খোলা বাজারে সরকারের প্রাপ্য ভাল মানের আটা বিক্রি করেও ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন বাকিবুর।
ইডির তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যে, বাকিবুর এবং তাঁর মালিকানাধীন রাইস মিল ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে ২০২৩-এর ৩১ মার্চ— এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মনগড়া কৃষকের নামে তৈরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট ৪৬৫ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ধান বিক্রির টাকা হিসাবে পেয়েছে। অথচ, এই সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের গ্রাহকেরা এক দানা ধানও সরকারের কাছে বিক্রি করেননি বলে ইডির দাবি। বস্তত, এই নামেই আদতে কেউ নেই। ফলে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে বেরিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাকিবুরদের হাতযশে সেই বাবদ এক দানা ধানও ঢোকেনি সরকারের খাদ্য ভান্ডারে।