রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাতের বিরাম নেই। এ বার সংঘাত রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে। প্রায় এক মাস আগে ফাইল রাজভবনে গিয়েছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের অনুমোদনের জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ফাইল রাজভবন থেকে ছাড়া হয়নি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। গত ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে নবান্নে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ করতে। প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় মাস চারেক আগে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্যপদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তাই ১৪ ডিসেম্বর নবান্নের বৈঠকে নতুন সদস্য নিয়োগ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। একেবারে শেষ মুহূর্তে নিজের অবস্থান জানিয়ে বৈঠকে যোগ দেননি বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী এবং স্পিকারের যৌথ সম্মতিতে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম চূড়ান্ত করে রাজ্য সরকার। তার পর সেই ফাইল অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় রাজভবনে।
নবান্ন সূত্রে খবর, সেই ফাইল অনুমোদন পেয়ে এখনও রাজ্য সরকারের কাছে আসেনি। সেই কারণে রাজ্য এখনও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ করতে পারছে না। এ কারণে অসন্তুষ্ট প্রশাসনের একাংশ। তবে এখনই প্রকাশ্যে এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। আপাতত এই বিষয়ে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করে রাজভবনের অবস্থান বুঝে নিতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। সম্প্রতি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে ইডির আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যে ‘জঙ্গলরাজ’ কায়েম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল। এমনকি ঘটনার জেরে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে রাজভবনে তলব করেছিলেন তিনি। সোমবার শিক্ষা দফতরের এক অনুষ্ঠানে নাম না করে রাজ্যপালের এ হেন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “দেশের শ্রেষ্ঠ থানার সেরা হয়েছে শ্রীরামপুর। যদি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা খারাপই হবে তা হলে এই স্বীকৃতি এল কোথা থেকে। কলকাতা শহরও দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ শহর বলেই বিবেচিত হয়েছে।”
তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়েও রাজভবনের সঙ্গে সংঘাত চলছে নবান্নের। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের আর এক বার সংঘাত তৈরি হবে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। তবে রাজ্য প্রশাসনের আর একটি অংশ মনে করছে, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেবের নিয়োগের আগেই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার কারণেই হয়তো ফাইলের ছাড়পত্র আটকে রেখেছে রাজভবন।