handcuff

ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে হাতকড়া পরিয়ে ট্রেনে চাপাল হুগলি পুলিশ! ভিডিয়ো ভাইরাল

সকলেই যখন এই ঘটনার সমালোচনায় সরব, তখন হুগলি জেলা পুলিশ কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ১৬:৫৫
Share:

এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদ্ধ হুগলি জেলা পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়া এক ছাত্রকে গ্রেফতার করে ট্রেনে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ছাত্রের হাতে পরানো স্টিলের হাতকড়া। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদ্ধ হুগলি জেলা পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কী ভাবে এক জনকে এ ভাবে হাতকড়া পরিয়ে প্রকাশ্যে নিয়ে যাওয়া হল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবী থেকে মানবাধিকার কর্মীরা। তবে সকলেই যখন এই ঘটনার সমালোচনায় সরব, তখন হুগলি জেলা পুলিশ কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। তারকেশ্বর থানা এলাকার আসতারা গ্রামের বাসিন্দা সায়নদীপ সামন্ত তখন চাপাডাঙা কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেই সময় ওই কলেজে একটি ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তা নিয়ে থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য ডাক পড়ে সায়নদীপের। পুলিশের দাবি, আদালত বার বার সমন পাঠানোর পরেও হাজিরা দেননি ওই ছাত্র। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। সমন অগ্রাহ্য করার কারণে চন্দননগর আদালত সায়নদীপের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

সেই পরোয়ানার ভিত্তিতেই সায়নদীপকে শুক্রবার তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর লোকাল ট্রেনের ভেন্ডর কামরায় চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চন্দননগর আদালতে। সেই সময় ওই ট্রেনে থাকা যাত্রীদের চোখে পড়ে সায়নদীপের হাতে হাতকড়া বাঁধা। তাঁদেরই কয়েক জন ভিডিয়ো তোলেন। সেই ভিডিয়ো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় ট্রেনের সিটে বসে রয়েছেন সায়নদীপ। পাশে এক পুলিশ কর্মী। পরে জানা যায়, তিনি তারকেশ্বর থানার কনস্টেবল প্রবীর শূর।

Advertisement

আরও পড়ুন: মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবে রবিবার থেকে ফের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা

মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত একাধিক মামলায় শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কোনও বিচারাধীন বন্দি, অভিযুক্ত, এমনকি সাজাপ্রাপ্তকেও হাতকড়া বা কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কী ভাবে এক জনকে প্রকাশ্যে হাতকড়া পরিয়ে ট্রেনে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হল? এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূর বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালত বার বার নিষেধ করার পরেও এটা পুলিশের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা অনেক বার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোনও ঘটনাতেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মীর কোনও শাস্তি হয় না। আদালত তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পর কার্যকরী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই প্রবণতা উদ্বেগজনক।”

ওই ছাত্র এর আগে তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। ওই সংগঠনের হুগলি জেলা প্রমুখ সঞ্জয় অধিকারী এ দিন বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ওই ঘটনার সময়ে সায়নদীপ আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করি। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এই ঘটনায়।” হুগলি জেলা বিজেপির নেতা তথা আইনজীবী স্বপন পালও এই ঘটনার সমালোচনা করেন। তিনি বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: পার্থর বাড়িতে বৈশাখী, ইস্তফাপত্র নিলেন না শিক্ষামন্ত্রী, তদন্তের আশ্বাস

কোন কোন ক্ষেত্রে হাতকড়া পরানো যায়? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রঞ্জিৎবাবু জানান, কেবলমাত্র পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুনির্দিষ্ট আবেদনের ভিত্তিতে বিচারকের নির্দেশে কোনও অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বা বিশেষ কোনও অভিযুক্তের হিংসাত্মক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলে পুলিশ আদালতে আবেদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র বিচারকই সেই আবেদনের যথার্থতা বিচার করে ওই নির্দেশ দেন।”

বিভিন্ন মহল থেকে ঘটনার সমালোচনা করা হলেও, গোটা বিষয় নিয়ে মুখ খোলেনি হুগলি জেলা পুলিশ। তারকেশ্বর থানার এক আধিকারিকের সাফাই, ‘‘ওঁকে দু’হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি। এক হাতে বাঁধা ছিল।” তবে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশ সুপার গোটা ঘটনার একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তারকেশ্বর থানার ওসি-র কাছে।

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement