তিন বার ধরা পড়েও বেপরোয়া চোলাই-চাঁইরা 

আবগারি দফতরের দাবি, গত ১৬ নভেম্বরও শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়ায় তল্লাশি অভিযান হয়েছিল। সে দিন ১৮ লিটার চোলাই মদ নষ্ট করেছিলেন আবগারি কর্তারা। দায়ের হয়েছিল মামলাও। কিন্তু ১২ দিনের মাথায় সেই চৌধুরীপাড়ায় বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছেন ১০ জন। তবে তাঁরা সকলেই চোলাই খেয়ে মারা গিয়েছেন—ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার আগে তা বলতে রাজি নয় সরকার।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

শান্তিপুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্তেরা এর আগে অন্তত তিন বার আবগারি দফতরের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। নবান্নের আবগারি আধিকারিকদের দাবি, প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর ফের চোলাইয়ের কারবার ফেঁদে বসেছিল তারা।

Advertisement

আবগারি দফতরের দাবি, গত ১৬ নভেম্বরও শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়ায় তল্লাশি অভিযান হয়েছিল। সে দিন ১৮ লিটার চোলাই মদ নষ্ট করেছিলেন আবগারি কর্তারা। দায়ের হয়েছিল মামলাও। কিন্তু ১২ দিনের মাথায় সেই চৌধুরীপাড়ায় বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছেন ১০ জন। তবে তাঁরা সকলেই চোলাই খেয়ে মারা গিয়েছেন—ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার আগে তা বলতে রাজি নয় সরকার।

নবান্নের খবর, সিআইডি তদন্তের পাশাপাশি আবগারি দফতরও নিজস্ব তদন্ত শুরু করছে। প্রাথমিক তদন্তে দফতর জেনেছে, শান্তিপুরের নৃসিংহপুর-চৌধুরীপাড়া এলাকায় চোলাই মদের ভাটি পুরনো। সেখানে মাঝে মাঝেই তল্লাশি চালানো হয়। ২০১৩-র ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬-র ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৭-র ৭ নভেম্বর তিনবার শান্তিপুরের মূল চোলাইয়ের কারবারি উত্তম মাহাতোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তার ভাটি থেকে ৩০-৬০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার হওয়ায় পর দিন জামিন পায় সে। মূল অভিযুক্ত চন্দন মাহাতোকে (বুধবার রাতে হাসপাতালে সে মারা গিয়েছে) গত ৬ এবং ১৮ অগস্ট পর পর দু’বার গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সে-ও ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। কারণ, তার ভাটি থেকে উদ্ধার হয়েছিল মাত্র ১০ লিটার চোলাই মদ।

Advertisement

আরও পড়ুন: নৌকা আর বাইকেই চলাচল চোলাইয়ের

কর্তাদের বক্তব্য, বেঙ্গল এক্সাইজ আইনের ৪৬এ ধারায় চোলাই মদ কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করার কথা বলা হয়েছে। সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডের পর সেই আইন সংশোধন করে ৪৬এএ ধারাটি যোগ করা হয়েছে। তাতে বিষ মদে মারা গেলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাটিতে তল্লাশি চালিয়ে মদ বাজেয়াপ্ত করে ৪৬এ ধারায় মামলা করা হয়। ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে বিষক্রিয়া পাওয়া গেলে ৪৬এএ ধারা দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে ছাড়া পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও কেন ছাড়া পায় চোলাই-চাঁইরা? আবগারি কর্তাদের একাংশের দাবি, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’-পাঁচ হাজার টাকার চোলাই ধরে মামলা করতে হয়। অত্যন্ত কম পরিমাণ চোলাই বলে অপরাধের গুরুত্ব লঘু হয়ে যায়। ফলে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারের যৌক্তিকতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বিষক্রিয়া হলে সেই হাজার দুয়েকের টাকার চোলাই-ই কয়েকশো প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।’’

আরও পড়ুন: বিষমদের হানা এ বার শান্তিপুরে, মৃত ১০

সংগ্রামপুরের ঘটনার পরে কাঠামোগত ভাবেও বদল আনা হয়েছিল আবগারি দফতরে। তার পরেও অবশ্য চোলাই কারবারিদের সঙ্গে আবগারি দফতরের লুকোচুরি খেলা চলতে থাকে বলে জানাচ্ছেন কর্তাদেরই একাংশ।

এক আবগারি কর্তার কথায়, ‘‘চৌধুরীপাড়াতেই গত তিন মাসে ন’বার তল্লাশি চালিয়ে চোলাই উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। তার পরেও এই কাণ্ড।’’ আবগারি কমিশনার রণধীর কুমারকে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। এসএমএসেরও জবাব দেননি তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement