ফাইল ছবি।
বিধাননগর স্টেশনের এক আর দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ঘোষণার অপেক্ষা করছিলেন এক যুবতী। তবে সেই অপেক্ষায় অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। কারণ তিনি লক্ষ করছিলেন, খানিক দূরে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন এক তরুণী। এ বার কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ান ওই যুবতী। তাতেও লাভ হয়নি। দেখলেন, তরুণীর পর্যবেক্ষণ বন্ধ হয়নি!
বাধ্য হয়ে যুবতী প্রশ্ন করেন, ‘‘কিছু বলবে?’’ কাছে এগিয়ে এসে তরুণী বলেন, ‘‘আপনাকে ভারী মিষ্টি দেখতে।’’ ধন্যবাদ বলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন যুবতী। তখনই একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করেন তরুণী। জানতে চান, ‘‘আপনি কোথায় থাকেন? কী করেন? কী নাম আপনার?’’ সব উত্তর পাওয়ার পরে তরুণীর দাবি, ‘‘আমার কোনও ভাল বন্ধু নেই। আপনাকে বড় ভাল লেগেছে। ফোন নম্বরটা দিন, কথা বলব।’’ শেষ প্রশ্ন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে আছেন?’’
ঠিক এ ভাবেই গত কয়েক দিনে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন রেল স্টেশনে অপেক্ষাকৃত কমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে আলাপ জমানোর এবং ফোন নম্বর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নম্বর চাইতে দেখা গিয়েছে তরুণী বা কিশোরীদের। কয়েক জন যুবকও দাবি করেছেন, তাঁদের কাছেও একই ভাবে নম্বর চাওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত পোস্টে গত কয়েক দিনে ভরে গিয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটগুলি। নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রত্যেকেই জানতে চেয়েছেন, এ ভাবে নম্বর চাওয়া হচ্ছে কেন? নম্বর নিয়ে কী করা হতে পারে, তা ভেবে আতঙ্কিত অনেকেই। তাঁদের আশঙ্কা, এর পিছনে বড় কোনও চক্র কাজ করছে।
ফেসবুকে কলকাতা পুলিশের কাছে করা অভিযোগ
এমনই একটি পোস্টের নীচে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রায় ছ’শোরও বেশি জন। সম্প্রতি বিষয়টি কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে লিখেছেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা এক যুবতী। তাঁর দাবি, ‘‘স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে নম্বর চাওয়া হয়েছে আমার থেকে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক’’। কলকাতা পুলিশের তরফে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারিণী যুবতী শুক্রবার বলেন, ‘‘মেয়েটি বহুক্ষণ ধরে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়েছিল। এমন ভাবে
কথা বলছিল যে, খারাপ মনে হয়নি। আমার নম্বর দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে ফেসবুকে দেখলাম একই রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই।’’ নম্বর নেওয়ার পরে কী ঘটল? যুবতীর দাবি, ‘‘আমায় ফোন করেনি। তবে ওই নম্বরে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নেই। থাকলে কী হত জানি না।’’ যুবতীর দাবি, পুলিশের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে দেখা।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির উপরে কড়া নজর রাখছি। ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ রেল পুলিশের কাছে দায়ের হয়েছি কি না দেখছি। হলে তদন্ত হবে।’’