(বাঁ দিক থেকে) অমিত শাহ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে আবারও নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার কলকাতায় এসে জানিয়ে দিলেন, কেন পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। কেনই বা বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরি করা তাঁদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে শাহ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘দেশের সব রাজ্যে আমাদের ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার তৈরি হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু বাংলা এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার তৈরির মানে হল হল অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অনুপ্রবেশকারীদের ‘সিল’ করে দেওয়া। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরি হওয়ার মানে গরুপাচার বন্ধ হয়ে যাওয়া। বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরির মানে শরণার্থীদের সিএএ-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া।’’ এর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দিদি বেশ কয়েক বার আমাদের শরণার্থী ভাইদের বিপথে চালনা করছেন। সিএএ হবে কি না হবে, আইন বানিয়ে থেমে যাওয়া নিয়ে কথা বলেন। আজ আমি আপনাদের সবার সামনে বলে যাচ্ছি, সিএএ এই দেশের আইন। একে কেউ রুখতে পারবে না। সবাই নাগরিকত্ব পাবেন।’’
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ক্ষমতায় আসতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সংসদের দু’কক্ষে পাশ হয়েছিল নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি)। তার পর চার বছর হয়ে গেলেও সেই বিষয়ে রুল তৈরি করা হয়নি। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, সিএএ বিজেপির অঙ্গীকার। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাইয়েরা আশপাশে প্রতারিত হয়ে রাজ্যে রাজ্যে ঠাঁই নিচ্ছেন, যাঁদের ধর্মান্তরিত করার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের মান-সম্মান এবং সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব সমস্ত হিন্দুস্তানীর। তাই এটা (সিএএ) চালু হবেই দিদি।’’
বস্তুত, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে উদ্বাস্তুদের ভোট নিশ্চিত করতে অমিতের মন্ত্রক যে নাগরিক সংশোধনী আইনের রুল নিয়ে পদক্ষেপ করবে, তা নিয়ে জল্পনা রয়েইছে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ক্ষমতায় আসতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সংসদের দু’কক্ষে পাশ হয়েছিল নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি)। তার পর চার বছর হয়ে গেলেও সেই বিষয়ে রুল তৈরি করা হয়নি। সিএএ-র রুল তৈরির দায়িত্বে রয়েছে শাহের মন্ত্রক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সপ্তম বারের জন্য সংসদীয় সচিবালয়ের কাছে রুল তৈরির সময় চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
তবে চার বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে থাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে উদ্বাস্তু সমাজের একাংশের মধ্যে। বাংলায় যেমন মতুয়া সম্প্রদায়ের বড় অংশও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিএএ-র রুল তৈরি না হওয়ায়। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও বিষয়টি নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা বলেছেন। তাই লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির কাছে মতুয়া ভোট নিশ্চিত করার বড় হাতিয়ার হতেই পারে সিএএ। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান) যদি ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত।
কিন্তু কেন ওই তালিকায় মুসলিম সমাজের নাম নেই, তা নিয়ে পথে নামে সংখ্যালঘু সমাজ এবং বিরোধী দলগুলি। বিরোধীদের অভিযোগকে পরোয়া না করে বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্র। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিএএ নিয়ে তাঁর বিরোধিতার কথা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাই সিএএ রুল তৈরি হলে বিজেপির সঙ্গে তাঁর সংঘাত অনিবার্য বলেই মনে করা হচ্ছে।