কার্তিকপুজো উপলক্ষে সাজানো হয়েছে থাকা। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড আবহেই ‘কার্তিক লড়াই’ হবে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। শতাব্দী-প্রাচীন এই লোক উৎসব ঘিরেই প্রতি বছর সেজে ওঠে ভাগীরথী তীরের এই শহর। তবে অতিমারি পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এ বছরও বন্ধ থাকবে শোভাযাত্রা। মঙ্গলবার গাইড ম্যাপ প্রকাশ করে এ কথা জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন।
নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার প্রবেশপথ ছিল কাটোয়া। প্রাচীনকালে এই জনপদের নাম ‘কণ্টকনগর’ ছিল বলেও জানান ইতিহাসবিদরা। সে যুগে নদীবাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই শহর। ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই ‘বাবুসমাজ’-এর আনাগোনা বাড়ে কাটোয়ার গঙ্গা-তীরবর্তী এলাকায়। তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্যই গড়ে ওঠে যৌনপল্লী। যৌনকর্মীরাই সন্তানের কামনায় শুরু করেন কার্তিকপুজো। কাটোয়ার গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন চুনারি পাড়ার (এখন হরিসভা পাড়া) যৌনকর্মীদের হাত ধরেই কাটোয়ায় কার্তিকপুজোর চল শুরু। সেই পুজোয় খরচা দিতেন ‘বাবু’রা। কার পুজো বেশি আকর্ষণীয়— তা নিয়ে প্রতিযোগিতাতেও জড়াতেন তাঁরা। সেই থেকেই ‘লড়াই’ শব্দটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে কাটোয়ার কার্তিক পুজোর সঙ্গে। সেই লড়াই এখন পরিণত হয়েছে হরেক রকম বাজনা এবং আলো সমৃদ্ধ শোভাযাত্রায়। সেই যৌনপল্লীও এখন আর নেই কাটোয়ায়।
বর্তমানে কাটোয়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০০-র কাছাকাছি কার্তিকপুজো হয়। রাজা কার্তিক, জামাই কার্তিক, ন্যাংটা কার্তিক, সাহেব কার্তিক-- বিভিন্ন রকমের ঠাকুরের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে থিমের পুজো। কিন্তু কাটোয়ার ‘কার্তিক লড়াই’-এ প্রাচীন ঐতিহ্য এখনও বয়ে চলেছে ‘থাকা’।
কাটোয়ার কার্তিকপুজোর একটি মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
বাঁশ দিয়ে পিরমিডের মতো আকার তৈরি করা হয় এই পুজোয়। বাঁশের এই কাঠামোয় থাক থাক করে বসানো থাকে ২৫-৩০টি মাটির তৈরি পুতুলের মতো মূর্তি। এই মূর্তিগুলি বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনির চরিত্র। পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি তুলে ধরা হয় মাটির পুতুলগুলির মাধ্যমে। এরই নাম ‘থাকা’। এই থাকার মধ্যমণি থাকেন কার্তিক। থিমের গুঁতোয় কার্তিক লড়াইয়ে ‘থাকা’ অনেকটাই কোণঠাসা। যদিও খড়ের বাজার, বড়বাজার, ঝাউতলা গলি, ঝঙ্কারের মতো পুজো উদ্যোক্তরা এখনও বয়ে চলেছেন কার্তিকপুজোর 'থাকা'র ঐতিহ্য।
কাটোয়া ছাড়াও হুগলির বাঁশবেড়িয়া এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে কার্তিকপুজো হয় ধুমধাম করে। কার্তিক মাসের শেষে এই পুজো ঘিরে মেতে ওঠেন রাজ্যের এই দুই প্রাচীন জনপদের বাসিন্দারা। আশপাশের এলাকা থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এই দুই শহরের কার্তিক ঠাকুর দেখতে।