প্রস্তুতি: সিউড়ির স্কুলে খাতায় ছাপ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ইন্টারনেট সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেও এ বার মাধ্যমিকে প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়া আটকানো যায়নি। এই অবস্থায় টোকাটুকি রুখতে আরও কড়া হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। আজ, বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। শেষ হবে ২৭ মার্চ।
টোকাটুকি আটকাতে কঠোর পদক্ষেপ করছে সংসদ। কয়েকটি সংবেদনশীল জেলায় পরীক্ষা শুরুর সময় ইন্টারনেট তো বন্ধ থাকছেই। যদি কোনও স্কুলে লাগাতার টোকাটুকি চলে, তাদের অনুমোদনও বাতিল করে দিতে পারে সংসদ। এ বার প্রশ্ন করা হচ্ছে সাঁওতালিতেও। পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সে-দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’
গত বছর কয়েকটি সংবেদনশীল জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর পরে ঘণ্টাখানেক ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বুধবার বলেন, ‘‘এ বছর মালদহ, বীরভূম, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনার কিছু ব্লকে পরীক্ষা শুরুর কিছু আগে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। ৩০০টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে সংবেদনশীল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।’’ পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার গার্ডেনরিচ, বড়বাজার ও কাশীপুরের কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হতে পারে। ছেলেদের পরীক্ষা কেন্দ্রে এক জন অফিসার ও দু’জন কনস্টেবল থাকবেন। তবে মেয়েদের পরীক্ষা কেন্দ্রে এক জন অফিসার, দু’জন কনস্টেবলের পাশাপাশি থাকবেন দুই মহিলা কনস্টেবলও।
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষা-ঘরে এ বার তিন জন নজরদার থাকবেন। তাঁদের মধ্যে এক জন হবেন মুখ্য নজরদার, ওই ঘরের দায়িত্বে থাকবেন তিনিই। কোনও পরীক্ষার্থী মোবাইল ব্যবহার করছেন কি না, শুধু সেটাই দেখবেন এক জন নজরদার। মহুয়াদেবী বলেন, ‘‘পরীক্ষার হলে যে কোনও মোবাইল নেই, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই মুখ্য নজরদার প্রশ্নপত্র বিতরণ করবেন।’’ মহুয়াদেবী জানান, এ বারেও প্রায় ৩০০ সংবেদনশীল কেন্দ্রে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের স্পর্শ না-করেই পরীক্ষার কাজ চালাতে পারবে ওই যন্ত্র।
সংসদ জানিয়েছে, পরীক্ষার শুরুতেই কেউ মোবাইল-সহ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেই পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে। পরীক্ষা চলাকালীন কেউ মোবাইল ব্যবহার করলে তাঁর সব পরীক্ষা বাতিল তো হবেই, বাতিল হয়ে যাবে রেজিস্ট্রেশনও। সেই পরীক্ষার্থী সংসদের মাধ্যমে কোনও দিনই আর পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
ভেনু সুপারভাইজ়ার, সেন্টার ইনচার্জ এবং সেন্টার সেক্রেটারি ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। মহুয়াদেবী বলেন, ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্রে তিন নজরদার-সহ সমস্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও যদি শোনা যায় যে, কোথাও গণ-টোকাটুকি হচ্ছে, তা হলে সব দিক খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট স্কুলের অনুমোদন বাতিল করে দিতে পারে সংসদ।’’ ভেনু সুপারভাইজ়ার-সহ যে-তিন জনকে মোবাইল নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ছাড়া কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী যদি মোবাইল নিয়ে ঢোকেন বা কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তা হলে সেই শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী সম্পর্কে সংসদে গোপন রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে ভেনু সুপারভাইজ়ারকে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে সংসদ।
সংসদ জানিয়েছে, এ বারেও প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে কম্পিউটার জেনারেটেড নম্বরের মাধ্যমে ট্র্যাকিং তো চলবেই, থাকবে ম্যানুয়াল ট্র্যাকিংও। ভেনু সুপারভাইজ়ারের কাছ থেকে সিল করা প্রশ্ন পরীক্ষার হলে নিয়ে যাবেন মুখ্য নজরদার। সংসদ জানায়, পরীক্ষা চলাকালীন কোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সক্রিয় কি না, তা দেখতে কয়েকটি স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করে এ বার বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
পরীক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি ট্রাম ও বাস চালাবে রাজ্য পরিবহণ নিগম। কলকাতা ও শহরতলির প্রায় ১৯টি রুটে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বাস পাবেন পরীক্ষার্থীরা।