বিপদ: মিনাখাঁয় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে গ্রামে। ছবি: নির্মল বসু
করোনা, লকডাউনের উপর এ বার বৃষ্টির ঘা!
করোনা পরিস্থিতিতে টানা দু’দিন লকডাউন চলছে রাজ্যে। তারই মধ্যে নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টিতে বাধল বিপত্তি। কোথাও সমুদ্রবাঁধ, কোথাও নদীবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকল জল। দুর্ভোগে পড়লেন বহু মানুষ।
মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দু-দু’বার সমুদ্র বাঁধ ভাঙল তাজপুরে। তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের একাধিক জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে। আর সেই ফাটল
দিয়েই শুক্রবার সকালে জোয়ার চলাকালীন বঙ্গোপসাগরের নোনাজল ঢুকেছে ঢুকল রামনগর-১ ব্লকের তালগাছাড়ি-২ পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে। বেশ কয়েকটি পরিবারকে স্থানীয় আয়লা কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরে বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিনে প্রায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একটানা বৃষ্টিতে ও অমাবস্যার ভরা কোটালে রূপনারায়ণের জল ঢুকেছে তমলুক শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকায়। জলমগ্ন কোলাঘাট পুরাতন বাজার এবং তিনটি গ্রাম— কোলা, পাইকপাড়ি এবং সাহাপুরের একাংশ। কোথায় এক হাঁটু, তো কোথাও এক কোমর জল। অভিযোগ, কোলাঘাটে একটি স্লুইস গেটের দরজা খারাপ থাকায় জল ঢুকেছে। সেচ এবং পূর্ত দফতর স্লুইস গেট মেরামত করছে। কোলাঘাটে রূপনারায়ণের বাঁধেও দু’জায়গায় ফাটল ধরেছে।
টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে ময়না ব্লকের বলাইপন্ডা বাজার-সহ সংলগ্ন সুদামপুর, দোনাচক, মথুরাপুর গ্রামের রাস্তাঘাট। স্থানীয়রাই পাম্প চালিয়ে জল তুলে পাশের চণ্ডীয়া নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন। কাঁথি-৩ ব্লকের কালীনগর বাজার এলাকায় ঢুকেছে রসুলপুর নদীর জল। সেচ দফতরের আধিকারিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন করেছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে বুধ ও বৃহস্পতিবার নদী ও সমুদ্রবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। বাসিন্দাদের ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। জল আরও বাড়ার আশঙ্কায় বাঁধ লাগোয়া পরিবারগুলিকে সরিয়ে আনার তোড়জোড় চলছে। সাগর ব্লকের ধসপাড়া সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতের সুমতিনগর ও বঙ্কিমনগর গ্রামের কাছে মুড়িগঙ্গা নদীতে প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ
এলাকা নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে। ওই দু’টি গ্রামের সব ঘরবাড়িই কোমর সমান জলের তলায়। ডুবে রয়েছে ধান, পান, আনাজ খেত ও কয়েকশো পুকুর। বুধবার পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরে প্রায় ৫০০ মিটার সমুদ্রবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাসিন্দাদের, অভিযোগ, আয়লার পর থেকে বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। আমপানে আবার বাঁধের ক্ষতি হয়। সময় মতো বাঁধ তৈরি না হওয়াতেই এই বিপত্তি। সেচ দফতর জানিয়েছে, জল নামলে বাঁধগুলি সারানোর ব্যবস্থা হবে।
গাদিয়াড়ায় হুগলি নদীর বাঁধে ধস নামায় বাসিন্দারা ভয়ে রয়েছেন। এই বাঁধ ভাঙলে হাওড়ার শ্যামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। শ্যামপুর ১-ব্লকের বিডিও সঞ্চয়ন পান বলেন, ‘‘সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ১ ব্লকে আবার অতি বর্ষণে জল বেড়েছে শিলাবতীর। ডুবেছে গনগনির কাঠের সাঁকো। যাতায়াতে অসুবিধায় পড়েছেন আগরা পঞ্চায়েতের ৫-৬টি গ্রামের মানুষ।