মতভেদ নতুন নয়, বলছে হাইকোর্টের ইতিহাস

রায় দান নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ বিরল, কিন্তু নতুন নয়। দু’বছর আগে ১৬ অক্টোবর পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত নাসের খানের জামিনের আর্জি নিয়েও এমনই ভিন্ন মত দেখা গিয়েছিল দুই বিচারপতির মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতির কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৪
Share:

রায় দান নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ বিরল, কিন্তু নতুন নয়। দু’বছর আগে ১৬ অক্টোবর পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত নাসের খানের জামিনের আর্জি নিয়েও এমনই ভিন্ন মত দেখা গিয়েছিল দুই বিচারপতির মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতির কাছে।

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং বিচারপতি তৌফিকউদ্দিনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। শুনানির পরে রায় দানের সময় দেখা যায় একমত নন দুই বিচারপতি। তখন তাঁরা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে বিষয়টি পাঠিয়ে দেন। রায় দানের বদলে এজলাসকে জানান, তাঁদের মত ‘ব্যক্তিগত কারণে’ না মেলার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেই ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, রায় দানকে কেন্দ্র করে ডিভিশন বেঞ্চে বিভিন্ন সময়েই মতভেদ দেখা দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবীর বক্তব্য, সাধারণত ডিভিশন বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতির রায়কে স্বাগত জানিয়ে তাতে মত দেন জুনিয়র বিচারপতি। কিন্তু সব সময় তা হয় না। তখনই মতভেদ বেরিয়ে আসে। এই মতভেদ কখনও নিজেদের মধ্যে রেখে বিষয়টি অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন বিচারপতিরা। যেমন হয়েছিল নাসের খানের জামিনের ক্ষেত্রে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দুই বিচারপতি রায় দেওয়ার পরে দেখা যায়, মতে মেলেনি। তখনও বিষয়টি অন্য বেঞ্চে পাঠানো হয়।

Advertisement

এমনই হয়েছিল ২০১২ সালের আর এক মামলায়। এবং সেখানে ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন গিরীশচন্দ্র গুপ্ত। আদালত সূত্রের খবর, সেই মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির আবেদন শোনার পরে বিচারপতি গুপ্ত তাকে মুক্ত করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু বেঞ্চের অন্য বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় সাজা বহালের পক্ষেই রায় দেন। পরে অবশ্য তাঁরা তৃতীয় বিচারপতির কাছে বিষয়টি পাঠান।

সিনিয়র বা বরিষ্ঠ বিচারপতির রায় না-মানার আর এক উদাহরণ ২০০৪ সালের অ্যান্ড্রু ইউল মামলা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে কেন্দ্র করে ওই মামলায় বিচার্য বিষয় ছিল, সংবিধানের ২২৬ ধারা প্রয়োগ করা হবে কি না। প্রধান বিচারপতি অশোক মাথুর ধারা প্রয়োগের পক্ষে রায় দিলেও বেঞ্চের অন্য বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় তার বিরুদ্ধে মত দেন।

একই রকম মতভেদ দেখা দিয়েছিল ২০০৫ সালে রাজ্য পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে। ওই মামলার আইনজীবী অসীমেশ গোস্বামী বুধবার জানান, মামলায় রায় দিতে গিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয় বিচারপতি অমিত তালুকদার এবং বিচারপতি অরুণাভ বড়ুয়ার ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি তালুকদার ওই পুলিশ অফিসারের মৃত্যুকে খুন বলে তাঁর রায়ে জানান। কিন্তু বেঞ্চের অন্য বিচারপতি বড়ুয়া ওই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই রায় দেন।

২০০৭ সালে কলকাতা উত্তাল হয়েছিল হয়েছিল মনোজাইম কিট কেলেঙ্কারি নিয়ে। ওই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত গোবিন্দ সারদার আগাম জামিনের শুনানি শেষে রায় দান নিয়েও মতভেদ দেখা দিয়েছিল বিচারপতি ডি পি সেনগুপ্ত এবং বিচারপতি প্রবুদ্ধশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। পরে তা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।

এই মতভেদের ধারা বহাল রইল বুধবার, বিচারপতি গুপ্ত ও বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement