প্রতীকী ছবি।
শীতে তাপমাত্রা কমলেই ডেঙ্গির দাপট দমন করা যাবে বলে নবান্নের আশা। তার আগেই কলকাতা হাই কোর্ট জানতে চেয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে নবান্নকে হলফনামার আকারে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে তিন সপ্তাহের মধ্যে।
রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে মামলা করেছেন চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। সেই জনস্বার্থ মামলাতেই মঙ্গলবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলার আবেদনকারীর কৌঁসুলি শমীক বাগচী জানান, হাই কোর্ট অতীতে ডেঙ্গি সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারকে যে-সব নির্দেশ দিয়েছিল, সেগুলি রাজ্যে কত দূর পালন করা হয়েছে, তা-ও হলফনামায় জানাতেবলা হয়েছে।
মামলাকারীরা কলকাতা পুরসভা এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেও এই মামলায় যুক্ত করেছেন। তবে এ দিন পুরসভার তরফে কোনও কৌঁসুলি শুনানিতে হাজির ছিলেন না। কোর্টের নির্দেশ, কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানিয়ে পুরসভাকে আলাদা হলফনামা জমা দিতে হবে।
রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন আশান্বিত যুক্তি দেওয়া হয় যে, শীত আসছে। তাপমাত্রা কমলে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু হাই কোর্ট সেই যুক্তি পুরোপুরি মেনে নেয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ মনে করিয়ে দিয়েছে, ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুতে প্রশাসন দায় এড়াতে পারবে না।
মামলাকারীদের অভিযোগ, রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণ হুহু করে বাড়ছে। আগে কখনও এই হারে সংক্রমণ দেখা যায়নি। ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মৃতের তালিকায় রয়েছে শিশুরাও। ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত প্লেটলেটও পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এটা স্পষ্ট যে, রাজ্যে ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রশাসন ব্যর্থ। তাই এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের পদক্ষেপের আর্জি জানান মামলাকারী চিকিৎসক।
অনেকের পর্যবেক্ষণ, ডেঙ্গি মশাবাহিত রোগ। মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস করতে না-পারলে এই রোগ ঠেকানো অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ যেমন জরুরি, তেমনই দরকার জনসচেতনতা। ডেঙ্গি নিয়ে সরকারি স্তরে যেমন গাফিলতি আছে, তেমনই জনসচেতনতাও সেই স্তরে আছে কি না, উঠছে সেইপ্রশ্নও। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ বাড়ির আশেপাশে টবে, খালি পাত্রে জল জমিয়ে রাখছেন। তাতেই মশার বংশ বাড়ছে বলে অভিযোগ। সরকারি স্তরে পোস্টার বা মিছিল ছাড়া জল জমিয়ে রাখার প্রবণতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।