এই পোষ্যদের নিয়েই দিন কাটে দেবাশিসের। নিজস্ব চিত্র।
‘কবুতর যা যা যা’। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ সিনেমায় ভাগ্যশ্রীর প্রেমের বার্তা পায়ে বেঁধে সলমনের কাছে উড়ে দিয়েছিল সেই বিখ্যাত পায়রা। আবার বিশ্বখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ছবিতেও ‘শান্তির দূত’ হিসেবে এসেছে পায়রা।
সভ্যতার আদিকাল থেকে পায়রা ছিল মানুষের বার্তাবাহক। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড আর অ্যাপ শাসিত ভুবনগ্রামে কদর হারিয়েছে তারা। পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ অবশ্য সেই ইতিহাসই আঁকড়ে রয়েছেন এখনও। বর্ধমান শহর লাগোয়া গ্রামের বাড়িতে পুষেছেন বহু জাতের পায়রা। দিনভর উড়ে সেই পায়রারা আবার ফিরে আসে দেবাশিসের চিলেকোঠায়।
পায়রাদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন দেবাশিস। বিশ্ব শান্তি দিবস থেকে নানা কিসিমের উৎসব বা মেলার আকর্ষণ বাড়াতে অনেক সময় কবুতরবাজির আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা। ডাক পড়ে দেবাশিসের। তিনি হাততালি দিলেই খাঁচা থেকে কপোত-কপোতীরা উড়ে যায় নীল আকাশের ঠিকানায়। আবার সময় হলেই ফিরে আসে নিজেদের বাসায়।
বর্ধমান-১ ব্লকের রায়ান-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নারী খাঁপুকুর এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস প্রায় ৪০বছর ধরে পায়রা পালন করছেন। বর্তমানে তার ৭০টা পায়রা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পায়রা পোষার শখ। বিভিন্ন প্রজাতির পায়রা রয়েছে বাড়িতে। প্রতিদিন সকাল ৭টার সময় পায়রার ঘর খোলা হয়। এর পর পরিচর্যা চলে এক ঘন্টা। হাততালি দিয়ে আকাশে ওড়ানো হয় বেশ কিছুক্ষণ ধরে। ওড়ার অনুশীলনের শেষে পরপর পায়রাগুলি নেমে আসে। এরপর তাদের খেতে দেওয়া হয়। দেবাশিসের পোষ্যদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে গম, চাল, ধান, ভুট্টা এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল।
দেবাশিসের বাড়ির পায়রাদের বেশিরভাগই গেরোবাজ। তা ছাড়া, দেশি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে লালশিয়া, কালপেটিয়া, কালদুম, সবজিভুরা। বিদেশি ‘মেকপাউডার’-এর পাশাপাশি কাকজি, ঝোটন প্রভৃতি পায়রাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘একেকটি পায়রা আছে যেগুলি ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে ছেড়ে দিলেও ঠিক পথ চিনে বাড়িতে চলে আসে।’’ প্রতি দিনই কাজের জন্য স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই বেরোতে কাজে বেরোন। তবু কাজের ফাঁকেই চলে পায়রাদের প্রশিক্ষণ।