গরম থেকে বাঁচতে মা-মেয়ের মুখ ঢাকা ওড়নায়। —পিটিআই
আষাঢ়ে এসে কি চৈত্র-বৈশাখের প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি?
আবহাওয়া দফতরের গুরুগম্ভীর তথ্য-পরিসংখ্যানের বাইরে জনতার আম দরবারে অন্তত আলোচনার সারকথা এটাই। অনেকে আবার স্লোগানও বানিয়ে ফেলেছেন, ‘বদলা নয় বাদল চাই’। কারণ, গোটা চৈত্র-বৈশাখ যেখানে গরমের সহনশীলতার বাইরে যায়নি, সেখানে আষাঢ় মাসে তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা শহর কলকাতা-সহ কার্যত গোটা দক্ষিণবঙ্গের। অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে, আরও অন্তত দু’দিন এই পরিস্থিতি চলবে।
চৈত্র-বৈশাখ মিলিয়ে পুরো গ্রীষ্ণকালেই নিয়মিত ব্যবধানে কালবৈশাখী পেয়েছে এ রাজ্য। যখনই পারদ সহনশক্তির বাইরে যেতে শুরু করেছে, কালবৈশাখীর বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে।
অথচ এই আষাঢ় মাসেও কলকাতায় কার্যত লু বইতে শুরু করেছে। বাইরে বেরোলেই গরম হাওয়ার হলকায় জ্বলছে চোখমুখ। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বেশি থাকায় অস্বস্তি আরও বাড়ছে। এর থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর নেই আবহবিদদের কাছে। আলিপুর জানিয়ে দিয়েছে, বৃ্ষ্টির সম্ভাবনা তো দূর অস্ত, তাপপ্রবাহই চলবে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা, অর্থাত্ বুধবার পর্যন্ত। তার পরও যে বৃষ্টি হওয়ার মতো তেমন কোনও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে এমন কোনও পূর্বাভাস নেই। উত্তরবঙ্গে অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। ভারী বর্ষণ না হলেও বর্ষার প্রভাবে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি চলছে। দু-তিন দিনের মধ্যে ভারী বর্ষণও শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: গরমে দেদার কোল্ড ড্রিঙ্ক, আইসক্রিম? ক্লান্ত করছে কিন্তু এরাই
সরকারি হিসেবে বর্ষা ঢুকে গিয়েছে রাজ্যে। নিয়ম ভেঙে এ বার উত্তরবঙ্গের আগেই দক্ষিণে প্রবেশ করেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। কিন্তু তার প্রভাব নেই। বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষা করেও তার দেখা নেই। রবিবার সামান্য ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও তাতে হাঁসফাঁস অবস্থার সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। সোমবার সেই পরিস্থিতি আবারও যেই কে সেই। এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতরে পারদ উঠেছে ৪০ ডিগ্রিতে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গেই তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে চল্লিশের আশেপাশে। তার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৬৭ শতাংশ।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
আরও পড়ুন: ভিডিয়োয় ভয়ঙ্কর মুহূর্ত, পাইথনের ফাঁসে বনকর্মী
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে আলিপুরের আবহবিদদের ব্যাখ্যা, বর্ষা প্রবেশ করার করার পর যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়, তার প্রভাব খুবই দুর্বল। পরিবর্তে বায়ুমণ্ডলের নিচু স্তরে জোরালো পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহ রয়েছে। তাই এই বায়ুপ্রবাহ সরিয়ে মৌসুমী বায়ু প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে না বর্ষার মেঘ, নেই বৃষ্টিও।
দক্ষিণবঙ্গবাসী অবশ্য ভূগোলের এত সব খুঁটিনাটি বুঝতে চান না। শুধু জানতে চায়, বৃষ্টি কবে আসবে। সে প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য হতাশই করেছে আলিপুর।