মমতা এবং শুভেন্দু।
মমতার আইনজীবীর আবেদন মতো নন্দীগ্রাম মামলা হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে সরানোর আবেদন বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিলেন বিচারপতি চন্দ। তিনি বলেছেন, ‘‘ আচ্ছা। ঠিক আছে। আপনাদের দাবি বিবেচনা করছি। আপাতত এই নির্দেশ মুলতুবি থাকল ’’
রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আইনজীবীদের সম্পর্ক নিয়ে বিচারপতি চন্দের কথার জবাব দিতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘বিচারকের ভূমিকা পবিত্র। আইনজীবীর থেকে আলাদা।’’
অন্য বেঞ্চে মামলা সরানো নিয়ে আগের দিন শুনানির সময় কেন কিছু বলা হল না, তা জানতে চান বিচারপতি চন্দ। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘১৮ জুন শুনানির সময়ে আপনারা এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করলেন না। আমি বাড়ি ফেরার পর জানতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে বিচার হয়ে গিয়েছে।’’
অভিষেকের টুইটের প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘হ্যাঁ লক্ষ্য করেছি। বিজেপি সদস্যদের সঙ্গে আমরা ছবি টুইট করা হয়েছে।’’ এর পরই বিভিন্ন আইনজীবীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যোগাযোগের কথা তুলে ধরেন বিচারপতি চন্দ। তিনি বলেছেন, ‘‘আপনাদেরও রাজনৈতিক যোগ রয়েছে। আপনি কংগ্রেসের। মুখোপাধ্যায় বিজেপি-র। তার পরও মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মামলা লড়ছেন। এখন বিচারপতির পূর্ব জীবন নিয়ে বলতেই পারেন।’’
বিচারপতিকে এই মামলা থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনেক টুইটের কথা উল্লেখ করেন মমতার আইনজীবী। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন এবং প্রশান্ত ভূষণের টুইটেক কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ রকম টুইট কমপক্ষে ১০০টি আছে বলেও জানান তিনি। এর পর অভিষেক বলেন, ‘‘আপনাকে অনুরোধ করব মামলা থেকে সরে যান।’’
আবেদনকারীর পূর্ন অধিকার রয়েছে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে। আইনি ভাবে তা দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি চন্দ।
অভিষেকের সওয়ালের জবাবে বিচারপতি বলেন, ‘‘বিজেপির মোর্চা ও সেল রয়েছে। দু’টির কাঠামো আলদা। আমি যখন বিজেপি-র হয়ে মামলা লড়েছিলাম, তখন বিচারপতি আমাকে বলেছিলেন, কোন দলের? আমি বলেছিলাম, ভারতীয় জনতা পার্টির। তিনি বুঝতে পারেননি। আমি যখন বললাম বিজেপি। তখন তিনি বুঝতে পারলেন।’’
আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে আমি বিজেপির লিগ্যাল সেলের হেড ছিলাম বলে তাই তো? বুঝতে পেরেছি: বিচারপতি চন্দ
এর পর বিচারপতি বলেন, ‘‘মিঃ সিঙ্ঘভি আপনি কি বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো সম্বন্ধে জানেন? ’’
জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আমার অনেক বন্ধু বিজেপিতে রয়েছে, আমি ভালো করেই জানি। অধিভোক্তা পরিষদে আমাকে বক্তব্য রাখার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আমি যায়নি।’’
নন্দীগ্রাম মামলার আবেদন সময়মতো করা হয়েছে বলে দাবি করলেন মমতার আইনজীবী অভিষক। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ধরনের মামলা করার জন্য ৪৫ দিন সময় থাকে। সময়মতো তা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও বেঞ্চ খালি পাওয়া যায়নি। তাই এত দিন শুনানি শুরু হয়নি।’’ ২১ মে আবেদন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অভিষেক।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি হলে তা আদেও কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতার আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার আগের বিভিন্ন সময়ের পর্যবেক্ষণ বলছে এই ধরনের মামলায় নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে আশঙ্কা থেকে যায়। পক্ষপাতিত্বহীন বিচার আদালতের দায়িত্ব। এবং তা আদালতের নিশ্চিত করা উচিত।’’
বিচারপতির সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্কের অভিযোগ তুললেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেছেন, ‘‘বিচারপতি চন্দ আপনার সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত, পেশাগত, এবং আদর্শগত সম্পর্ক রয়েছে।’’ প্রসঙ্গত তৃণমূলের তরফে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বিরুদ্ধে আগেই এই অভিযোগ করা হয়েছিল। আগের দিন হাই কোর্টে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বার কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশ।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, ‘‘এখানে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে অভিযোগ করা যেতে পারে। আপনার সঙ্গে বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আপনি বিজেপি-র লিগ্যাল সেলের প্রধান ছিলেন। বিজেপি-র হয়ে বিভিন্ন মামলায় আপনাকে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। ’’
পুনর্বহালের আবেদন নিয়ে বিচারপতির প্রশ্নের জবাব দেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, ‘‘আপনি শুনতে চান বা না চান। আমি বুঝতে পারছি না কেন নিয়ম মেনে বেঞ্চ বদল হবে না। এতে সমস্যা কোথায়? আপনি যদি মামলা প্রত্যাহার না করেন, তবে আপনার পছন্দ মতো এই মামলা এগিয়ে যেতে পারে।’’ এর পরই অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘পুনর্বিবেচনা নিয়ে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে ঘোড়ার আগে গাড়ি দৌড়ের মতো হবে।’’ এর পরই সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম মামলাটি বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে যাবে। হঠাৎ ১৬ জুন জানতে পারি আপনার বেঞ্চে এসেছে মামলাটি।’’
এই মামলা সম্পর্কে বিচারপতি বলেন, ‘‘এই মামলার দু’টি দিক রয়েছে। একটি প্রশাসনিক, অপরটি বিচার সংক্রান্ত। আপনারা ঠিক করুন কোনটা বেছে নেবেন।’’ এর পরই জনপ্রতিনিধি আইনের ৮১ নম্বর ধারা অনুযায়ী শুনানির কথা জানান বিচারপতি চন্দ।
শুনানির শুরুতে বিচারপতি কৌশিক চন্দ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘১৮ জুনের আগে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তখন কেন এই মামলার নিরপেক্ষতা নিয়ে বলা হয়নি?’’ সিঙ্ঘভির উদ্দেশে তাঁর আরও জিজ্ঞাসা, ‘‘আপনারা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছিলেন পুনর্বহালের জন্য? ’’ এই কাজের জন্য বিচারপতি যে খুশি নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁর পরের কথাগুলি। এর পর চন্দ বলেছেন, ‘‘এটা কোন ধরনের পদ্ধতি? আপনারা তো এখানে এসে আপনাদের কথা জানতে পারতেন। এটা কোন ধরনের শিষ্টাচার?’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম মামলার আবেদনকারী। গত শুক্রবার বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানিয়েছিলেন নির্বাচনী মামলায় আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকার কথা। সে জন্যই বৃহস্পতিবারের শুনানিতে উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফল সংক্রান্ত মামলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সওয়াল করছেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফল সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হল।