পৌষমেলায় স্টল বুকিং-এ অনলাইনে নানা সমস্যা প্রথম দিনে

এ বারের পৌষমেলায় অনলাইনে দোকানের জায়গা বুকিংয়ের কথা আগেই জানিয়েছিল বিশ্বভারতী। খড়্গপুর আইআইটির তৈরি করা সফটওয়্যার দিয়ে ওই বুকিং হবে বলেও জানানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

অনলাইনে পৌষমেলায় দোকানের জায়গা বুকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম দিনেই বিতর্ক বাধল। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনলাইনে দোকানের জায়গা বুক করতে গিয়ে বুধবার তাঁদের পদে পদে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমস্যা সমাধানে হেল্পলাইন খোলার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এ বারের পৌষমেলায় অনলাইনে দোকানের জায়গা বুকিংয়ের কথা আগেই জানিয়েছিল বিশ্বভারতী। খড়্গপুর আইআইটির তৈরি করা সফটওয়্যার দিয়ে ওই বুকিং হবে বলেও জানানো হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে বুকিংয়ের কথা থাকলেও কিছু সমস্যার জন্য তা চালু করা যায়নি। এ দিন সকাল দশটার পর থেকে পৌষমেলা ডট ইন ওয়েবসাইটে মাধ্যমে দোকানের জায়গা বুকিং শুরু হয়। তবে কিছুক্ষণ পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা দেয় বলে অভিযোগ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেখা যায় টাকা জমা করা হলেও তার রসিদ বের হচ্ছে না। অনলাইনে ম্যাপ দেখে যে জায়গা বুক করতে চাওয়া হচ্ছে সেই জায়গাও ঠিকভাবে বুক করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। বুক করার পর বুকিং ঠিকঠাক হল কি না তাও কোনওভাবে দেখা যাচ্ছিল না বলে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়াও সাইটটিও সকাল থেকে ঠিকভাবে খুলছিল না। ব্যবসায়ী বিমল দাস, অরুণ পালরা বলেন, ‘‘অনলাইনে বুকিংয়ের পেজটি দীর্ঘ সময় পর খুললেও, বুক করার সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত বুকিংই সম্ভব হয়নি।’’ এমন নানাবিধ সমস্যা সত্ত্বেও তা জানানোর জন্য এখনও কোনও হেল্পলাইন খোলা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘অনলাইনে যাতে অসুবিধে না হয়, সে জন্য শুক্রবার থেকে একটি হেল্পলাইন ডেস্ক খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

তবে সামগ্রিকভাবে অনলাইনে বুকিং নিয়েই আপত্তি রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, অনলাইন বুকিংয়ে জায়গা পছন্দ নয়, যে জায়গায় তাঁরা আগে পৌষমেলায় দোকান করে এসেছেন সেই জায়গাতেই যেন এ বারও তাঁদের দোকান করতে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনলাইনে বহিরাগতরা এসে জায়গা ‘দখল’ করে অগ্রাধিকার পেয়ে যাবে, স্থানীয়রা বঞ্চিত হবে। এ ছাড়াও চারদিনের পরিবর্তে ছ’দিনের মেলা করা, ভাঙ্গা মেলা করা, দোকান বসানোর ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি ও দোকানের জন্য সিকিউরিটি মানি জমা নেওয়ার পদ্ধতি বাতিল করার দাবিও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এই সব দাবি-দাওয়া নিয়ে ২৫ নভেম্বর বিশ্বভারতীকে একটি স্মারকলিপিও জমা দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। ৩০ নভেম্বরও একটি চিঠি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় বসতে আবেদন জানিয়েছিল ব্যবসায়ী সমিতি। তবে এখনও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাদের কোনও আলোচনায় ডাকেননি বলে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের। এ দিন বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সমস্ত ব্যবসাদার, ডেকোরেটার্স কর্মীদের নিয়ে মেলার মাঠে জমায়েত হয়ে আলোচনায় হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্বভারতীর এই ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা আজ, বৃহস্পতিবার থেকে মাইকিং করে প্রচার শুরু করবেন ও শুক্রবার বোলপুরের সমস্ত ব্যবসায়ীরা পৌষমেলা নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে একটি স্মারকলিপি জমা দেবে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের দাবি মানতে হবে। না হলে আমরা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।’’

গ্রামীণ হস্তশিল্পীরাও ক্ষোভ জানিয়েছেন অনলাইন পদ্ধতি নিয়ে। তাঁদের আশঙ্কা, অনলাইনে বড় বড় কোম্পানিরা মেলায় স্টল পাবে। সমস্যায় পড়বেন গ্রামীণ শিল্পীরা। এই নিয়ে দিন ক’য়েক আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে একটি স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয় কবিগুরু হস্তশিল্প উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে। সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদা বলেন, ‘‘অনলাইনে দোকানের জায়গা বুকিংয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রামীণ হস্তশিল্পীদের। কারণ অনলাইনের ব্যাপারে সড়গড় নন গ্রামীণ হস্তশিল্পীরা।’’ সমিতির আরও অভিযোগ, বিশ্বভারতীর তরফে ডোকরা

শিল্পী ও পটশিল্পীদের জন্য ৮৪টি স্টলের জায়গা বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলা হলেও তা যথেষ্ট নয়। আমিনুলের প্রশ্ন, ‘‘বাকি যে সমস্ত বেতশিল্পী, চর্মশিল্পী, তাঁতশিল্পী-সহ বিভিন্ন শিল্পীরা রয়েছেন, তাঁরা কোথায় যাবেন?’’ শুক্রবার ওই সমস্ত হস্তশিল্পীরাও একত্রিত হয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেবেন বলে সমিতি জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement