শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন থেকে লাইসেন্সহীন হকারদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে । ছবি: সন্দীপ পাল।
হকার উচ্ছেদের প্রশ্নে তারা যে পুনর্বাসন দেওয়া বা অন্য কোনও আপসের দিকে যাবে না, তা কার্যত পরিষ্কার করে দিল রেল।
হকার উচ্ছেদ নিয়েই গত সোমবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মালদহ স্টেশন। গোলমালে মৃত্যু হয় এক আরপিএফ জওয়ানের। কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্যত ধমক দিয়েই শিলিগুড়ি জংশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে হকার হটিয়ে দিলেন রেলের অফিসারেরা।
রেল সূত্রের দাবি, এ দিন যে হকার উচ্ছেদ অভিযান হবে, তা নিয়ে আগাম নোটিস দেওয়া হয়নি। সেই কারণেই বেআইনি হকারেরা জড়ো হয়ে জলঘোলা করতে পারেননি। দু’টি প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইসেন্সহীন ছ’জন হকারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একটি স্টলও খুলে ফেলা হয়। লাইসেন্সহীন সব হকারকেই সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেলের অফিসাররা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বর থেকেও একই ভাবে হকারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার এই হকার উচ্ছেদ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েই বর্ধমানের আসানসোলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কুশপুতুল দাহ করা হয়। বিজেপির একটি অফিসে আগুনও লাগানো হয়। ঘটনাচক্রে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের হাতে বিজেপিরই পতাকা ছিল। এই নিয়ে দলের অন্দরে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রেল এই নিয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ার পরে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি বিষয়টিকে লঘু করে দেখতে পারছে না। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব আসানসোলে তাঁদের হকার ইউনিয়ন নেই বলে দাবি করলেও, মাস কয়েক আগে বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার তরফে আসানসোল ডিআরএমের কাছে চিঠি দিয়ে কমিটির কথা জানানো হয়েছিল। বুধবারের ঘটনায় ওই কমিটির কয়েক জন সদস্য জড়িত ছিলেন বলেও জেনেছে পুলিশ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘ওই লোকেরা আমাদের সংগঠনের সদস্য কি না, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছি।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ি স্টেশনে যাত্রীদের মতামত ও অভিযোগ শোনার পরে প্ল্যাটফর্ম কতটা পরিষ্কার তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন রেলের অফিসারেরা। ফল সাজিয়ে ডালা পেতে বসা হকারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল। ডেকে পাঠান জিআরপি এবং আরপিএফ কর্মীদের। স্টেশনে ঢোকার মুখেই শুকনো খাবার ও ঠান্ডা পানীয় বিক্রির স্টল বিপিন কুমারের। স্টলের কোনও কাগজপত্র রয়েছে কি না জানতে চান অফিসারেরা। দোকানের আলমারির ড্রয়ার থেকে একটি কাগজ বের করে পার্থবাবুর হাতে তুলে দেন বিপিন। তা হাইকোর্টের ‘স্টে-অর্ডার’। সেটি দেখেই রেগে ওঠেন পার্থবাবু। প্রশ্ন করেন, ‘‘এই কাগজে কি স্টল তৈরির কথা বলা রয়েছে?’’ বিপিন বলেন, ‘না, স্যার’। পার্থবাবু ফের বলেন, ‘‘এখানে যে স্থিতাবস্থার কথা রয়েছে, তার মানে আগের মতো মাটিতে জিনিস সাজিয়ে বসা। স্টল করেছেন কেন? সরিয়ে ফেলুন।’’ বিপিন বলেন, ‘‘পরে সরাচ্ছি স্যার। দাদা আসুক।’’ পার্থবাবু ধমকে ওঠেন, ‘‘এখনই সরান। আমার সামনে স্টল সরাতে শুরু করুন।’’ স্টল সরানো শুরু হয়। রেলের অফিসারদের মেজাজ বুঝে প্ল্যাটফর্ম থেকেও সরে যেতে শুরু করেন হকারেরা।
রেল সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি স্টেশনে ১৮টি এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ৩৭টি লাইসেন্সহীন স্টল রয়েছে। কিছু স্টল নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। সেই সঙ্গে দুই স্টেশন মিলিয়ে অন্তত সাড়ে তিনশো হকার। প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হকারদের জন্য ব্যস্ততার সময়ে যাত্রী চলাচলে ভোগান্তি হয়। রেলের তরফে বিভিন্ন সময়ে লাইসেন্সহীন হকারদের প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন চত্বর থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। যদিও রেলের নিরাপত্তা ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্মী-আধিকারিকদের যোগসাজসেই দিনের পর দিন হকাররা অবৈধ ভাবে রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
রেলের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, এ দিনের ‘কড়া মনোভাব’ আগামী দিনেও দেখানো হবে। এ দিন হকার সংগঠনের তরফে পুনর্বাসনের দাবি তোলা হয়েছিল। তৃণমূল প্রভাবিত শিলিগুড়ি জংশন হকার ইউনিয়নের সভাপতি সঞ্জয় পাঠকের কথায়, ‘‘পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলেই সকলে সরে যাবে। তবে আলোচনা না করে কাউকে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানো উচিত হয়নি।’’ পার্থবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পুনর্বাসনের কথা বলতে পারছি না। প্রথমে অবৈধ কাঠামো ভেঙে লাইসেন্সহীন দোকান বসা বন্ধ করতে হবে। পরে অন্য বিষয় ভেবে দেখা যাবে। দ্রুত দুই স্টেশনকে হকারমুক্ত করা হবে।’’