— ছবি সংগৃহীত
পুরনো দিনের কথা ফিরে তো এলই। সেই সঙ্গে এ যেন চক্রবৎ আবর্তন!
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের পদ থেকে বদলি হয়েছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উত্তরাধিকারী’ হিসেবে যে-আইএএস অফিসারের হাতে তিনি সে-দিন দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন, তাঁর নাম হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সোমবার নবান্নে বিদায়বেলায় আলাপনবাবু যখন মুখ্যসচিবের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন সেই হরিকৃষ্ণের হাতে, প্রবীণ আমলাদের অনেকের মনে তখন যেন পুরনো সেই দিনের কথাই ঘুরেফিরে আসছিল।
এখানেই শেষ নয়। অনেক প্রবীণ আমলা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের এক জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকের প্রশাসনিক জুটির কথাও। সেই জেলাশাসকের নাম ছিল হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা, যিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে হরিকৃষ্ণের উত্তরাধিকারী হিসেবে সোমবার নিযুক্ত হয়েছেন।
বিদায়বেলায় এমন চমক অবশ্য অনেকেই আঁচ করতে পারেননি। বরং মুখ্যসচিবকে নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপড়েনের ছায়া এ দিন সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে নবান্নের বহু অফিসারের মুখে। শীর্ষ কর্তার ভবিতব্য কী হবে, কেন্দ্র কোনও নতুন আয়ুধ নিক্ষেপ করবে কি না, তা নিয়ে চোরাগোপ্তা উদ্বেগ ছিল। তবে প্রকাশ্যে তেমন আলোচনা করার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউই।
এ দিন সকালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে-প্রশাসনিক বৈঠক করেন, সেখানেও মুখ্যসচিব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলাপনবাবু। সেই বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, নবান্ন এ ব্যাপারে কিছু বলবে না। তবে কেন্দ্রের কাছে ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রশাসনের খবর, এই উদ্বেগের মধ্যেই ফের চিঠি আসে কেন্দ্রের। তাতে ১৯৫৪ সালের আইএএস বিধির ৬(এ) ধারার উল্লেখ করে বলা হয়, ডেপুটেশন নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মতান্তর থাকলে কেন্দ্রের অবস্থানই চূড়ান্ত। ওই চিঠিতে আলাপনবাবুকে আজ, মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লিতে কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রকে হাজির হতে বলা হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, কেন্দ্র যে এমনটা করতে পারে, তা রাজ্যের পোড়খাওয়া আমলাদের অনেকেই আঁচ করেছিলেন। খোদ আলাপনবাবুও তাই আগে থেকেই মনস্থ করেছিলেন, এমন কিছু ঘটলে প্রথামাফিক এ দিনই অবসর নেবেন। সে-কথা মুখ্যমন্ত্রীও জানতেন। তাই ওই চিঠি পাওয়ার পরেই অবসর গ্রহণ চূড়ান্ত হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, অবসরের পরে আগামী তিন বছর রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন আলাপনবাবু। নতুন মুখ্যসচিব হবেন হরিকৃষ্ণ। কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এমন ‘নির্মম’ কেন্দ্রীয় সরকার তিনি আগে দেখেননি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই উদ্বেগের আবহাওয়া কিছুটা বদলে যায়। বিদায়ী মুখ্যসচিব এবং নতুন মুখ্যসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বহু অফিসার। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ‘উত্তরাধিকারী’-কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন আলাপনবাবু। তার আগে হরিকৃষ্ণ তাঁর ছেড়ে আসা স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে বুঝিয়ে এসেছিলেন। এর পরে শুরু হয় রাজ্যের আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের সভা। সেই সভার মূল বিষয় ছিল বিদায়ী এবং নতুন মুখ্যসচিবকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেই অনুষ্ঠানের পরে, রাতে নতুন মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে রাজ্য সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা আলাপনবাবুর একটি বৈঠকও হয়।