মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ফাইল চিত্র।
একেই তো টানাটানির সংসার। তার উপরে এখন লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলিতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে। নতুন প্রকল্প বা পরিকল্পনায় কার্যত রাশ টানতে হচ্ছে মূলত সেই কারণেই। কিন্তু বিভিন্ন দফতরে এমন কিছু কিছু প্রকল্প রয়েছে, সরকারের পক্ষে যেগুলি কোনও মতেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এমনকি টাকার অভাব থাকায় সেগুলির গতি যে শ্লথ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই।
এই পরিস্থিতিতে সব দফতরেরই প্রকল্পের তথ্য, কাজকর্ম, অগ্রগতি সম্পর্কে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নিজে নিয়মিত ওয়াকিবহাল থাকতে চাইছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। কোন প্রকল্পকে কতটা অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, কাজ চালানোর জন্য কী ভাবে টাকা জোগাড় হবে, কোন প্রকল্প অত্যন্ত বেশি সময় ধরে চলায় টাকার অপচয় হচ্ছে— এই সব বিষয় জানা থাকলে আর্থিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে সুবিধা হবে। সেই জন্য এক সুতোর সমন্বয়ে সব দফতরকে বাঁধতে চাইছে সরকার।
ঠিক হয়েছে, সেই সমন্বয়েরই অঙ্গ হিসেবে প্রতিটি দফতরের যাবতীয় প্রকল্প, তাদের কাজকর্মের অগ্রগতি প্রতি মাসে খতিয়ে দেখবেন মুখ্যসচিব স্বয়ং। সম্প্রতি দফতরগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য-ভিত্তিক নজরদারি এবং সমন্বয়ের জন্য বৈঠক হবে দফায় দফায়। প্রতিটি দফতরের জন্য সেই বৈঠক-সূচিও তৈরি করে দিয়েছে নবান্ন। বৈঠকের অন্তত তিন দিন আগে দফতর-ভিত্তিক মূল প্রকল্পগুলির অগ্রগতির তথ্য পাঠিয়ে দিতে হবে মুখ্যসচিবের দফতরের কাছে। অতীতে এই ভাবে নির্ঘণ্ট তৈরি করে দফতরগুলির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হত না বলেই প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
বৈঠক-সূচি অনুযায়ী মাসের প্রথম সোমবার নির্দিষ্ট সময় ধার্য রাখা হচ্ছে স্কুলশিক্ষা দফতরের জন্য। সেখানে মিড-ডে মিল, বৃত্তি, স্মার্টফোনের টাকা বিলি, পড়ুয়াদের ঋণ কার্ড, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি-সহ সব কিছুরই পর্যালোচনা হবে। প্রথম মঙ্গলবার বৈঠক হবে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে। বুধবার স্বাস্থ্য নিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যসচিব। তাতে করোনা তো বটেই, স্বাস্থ্যসাথী-সহ আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। শুক্রবারের বৈঠকের বিষয়বস্তু ভূমি ও ভূমি সংস্কার। শনিবার নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর এবং সামাজিক ক্ষেত্রগুলি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন মুখ্যসচিব।
মাসের দ্বিতীয় সোমবারে সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জন্য। দ্বিতীয় মঙ্গলবার পঞ্চায়েত এবং ই-গভর্ন্যান্স নিয়ে বৈঠক হবে। প্রতি দ্বিতীয় বুধবার অর্থ দফতরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করবেন মুখ্যসচিব। তাতে রাজস্ব, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন, বেশি বরাদ্দের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। দ্বিতীয় শুক্রবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পর্যালোচনা। মাসের তৃতীয় সোমবার সেচ, মঙ্গলবার গ্রামোন্নয়ন, বুধবার কৃষি, শুক্রবার শিল্প, শনিবার পরিবেশ ও বন দফতরকে নিয়ে বৈঠক করবেন দ্বিবেদী। প্রতি মাসের চতুর্থ সোমবার পরিবহণ, মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি, বুধবার পূর্ত, শুক্রবার খাদ্য এবং শনিবার আবাসন দফতরের কাজকর্ম খতিয়ে দেখবেন মুখ্যসচিব।