রানাঘাট আদালতে তোলা হচ্ছে মূল অভিযুক্ত ব্রজ গয়ালিকে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ায় গণধর্ষণের পরে মৃত কিশোরীর বাবা যদি ময়না-তদন্ত ছাড়াই শ্মশানে তার দেহ সৎকার করে থাকেন তা হলে তিনিও কেন প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় অভিযুক্ত হবেন না, সোমবার রানাঘাট আদালতে সেই প্রশ্ন তুললেন অভিযুক্ত পক্ষের এক আইনজীবী। পুলিশের কাছে মেয়েটির মায়ের দায়ের করা অভিযোগে ভয় দেখানোর প্রসঙ্গ না থাকলেও এখন তদন্তের পর্বে সিবিআই কেন তা টেনে আনছে, সেই প্রশ্নও তোলা হয়।
সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ দিন আদালতে হাজির করানো হয় ধর্যণ-খুনে মূল অভিযুক্ত সোহেল ওরফে ব্রজ গয়ালি এবং তার মামাতো ভাই প্রভাকর পোদ্দারকে। অভিযুক্তদের আইনজীবী তাদেরকে নির্দোষ দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। ব্রজর বাবা যে শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য তা উল্লেখ করে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, ধৃতেরা ‘প্রভাবশালী’, ছাড়া পেলে তারা তদন্ত প্রভাবিত করতে পারে। রানাঘাটের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক সুতপা সাহা দু’জনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের চার দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ এপ্রিল তাদের আবার আদালতে হাজির করাতে হবে। রবিবার তিন ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হলে তাদের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অর্থাৎ সেই
দিনেই পাঁচ জনকে আদালতে হাজির করানো হবে।
গত ৪ এপ্রিল ব্রজর জন্মদিনের পার্টিতে চোদ্দো বছরের মেয়েটিকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার সময়েই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মা জানিয়েছেন, পরের দিন ভোর ৪টে নাগাদ সে মারা যায়। সকালে গ্রামের শ্মশানে তার দেহ দাহ করা হয়, যেখানে শবদাহ করতে কোনও ডাক্তারের দেওয়া ‘ডেথ সার্টিফেকেট’ লাগে না। এর পাঁছ দিনের মাথা।, ৯ এপ্রিল চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে মৃতার মা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন প্রভাকরের আইনজীবী রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “মেয়েটির মা এআইআরে ভয়ের কথা না লিখে মানসিক আবস্থা ভাল না থাকার কারণে অভিযোগ করতে দেরির কথা লিখেছেন। সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর থেকেই ভয়ের বিষয়টি তুলে আনা হচ্ছে। তদন্ত সাজানো পথে এগোচ্ছে।” তাঁর আরও প্রশ্ন, “মেয়টির বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মৃতদেহ সৎকার করেছেন। তা হলে কেন তাঁকে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হবে না?” সিবিআইয়ের বক্তব্য, মামলাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া এফআইআর-ই শেষ কথা নয়। তদন্তে যেমন তথ্যপ্রমাণ উঠে আসছে, তারা সেই পথেই চলছে।