প্রতীকী ছবি।
প্রায় পাঁচ বছর তাঁর খোঁজ ছিল না। এত দিন পরে সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার খোঁজ দিল হ্যাম রেডিয়ো। তাদেরই দৌলতে তিনি ফিরে আসছেন নিজের গ্রামে। ফিরে পাচ্ছেন তাঁর ছেলে এবং অন্য আত্মীয়স্বজনকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার সোলকামারি গ্রামের বছর তেত্রিশের ওই নিরুদ্দেশ মহিলা অবশেষে ঘরে ফিরছেন জেনে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, অণিমা চক্রবর্তী নামে কলকাতার এক মহিলা চলতি মাসের মাঝামাঝি বারাণসী বেড়াতে গিয়ে সেখানকার পাণ্ডেপুর মানসিক হাসপাতালে মানসিক রোগগ্রস্তদের খাবারদাবার দিতে যান। সেখানে বাংলায় কথা বলা এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি জানতে চান, তাঁর বাড়ি কোথায়? ওই মহিলা জবাব দেন, তাঁর বাড়ি কলকতায়। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারেননি ওই মহিলা। হ্যাম রেডিয়োর কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে অণিমাদেবীর যোগাযোগ আছে। তিনি ওই মহিলার ছবি-সহ হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অম্বরীশবাবু জানান, ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা কিছুই বলতে পারছিলেন না। অনেক জিজ্ঞাসার পরে তিনি শুধু তাঁর দাদার নাম বলেন। অম্বরীশবাবু বলেন, “সেই দাদার নামের সূত্র ধরে অনেক খোঁজখবর করে জানতে পারি, ওই মহিলার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার সোলকামারি গ্রামে। ওই মহিলার বছর চোদ্দোর একটি ছেলেও আছে। ছেলের ছবি ওই মহিলার কাছে পাঠানো হয়। ছেলের ছবিও চিনতে পারেননি ওই মহিলা। শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য তাঁর বৌদির ছবি দেখে চিনতে পারেন।
ওই মানসিক ভারাসাম্যহীন মহিলা যে-গ্রামে থাকেন, সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, “ছেলের ছবি দেখে উনি চিনতে পারেননি। ছেলে যখন খুব ছোট, তখনই উনি বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তাই মায়ের ছবি দেখে ছেলেরও মাকে মনে থাকার কথা নয়। ওই মহিলার স্বামী বিয়ের বছরখানেক পরেই মহিলাকে ছেড়ে চলে যান। ফলে ওঁর দাদা-বৌদির কাছেই ছেলেটি মানুষ হচ্ছে। দাদা-বৌদিরও আর্থিক অবস্থা ভাল নয়।”
সোলকামারি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আবু সইদ মেহেদি বলেন, “ওই মহিলার দাদা-বৌদি দিনমজুরের কাজ করেন। ওঁদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। এই অবস্থায় ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা বাড়িতে ফিরে এলে তাঁর চিকিৎসা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। ওই মহিলার চিকিৎসা চালাতে আমরা গ্রামের সবাই সাহায্য করব। সেই সঙ্গে ওঁর দাদাকে কিছু জমি দিয়ে সাহায্য করা যায় কি না দেখছি।” ভারসাম্যহীন মহিলার বৌদি বলেন, “বছর পাঁচ আগে উনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনও খোঁজ পাইনি। উনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসুন, এটাই চাই।”