হলদিয়া বন্দর।
পণ্য পরিবহণের গড় বৃদ্ধির নিরিখে দেশের অন্য বন্দরকে পিছনে ফেলল হলদিয়া। এমনটাই দাবি কর্তৃপক্ষের।
সর্বাধিক পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও এই বন্দর আগের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস) প্রবীন দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘গত ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে দেশের অন্য বন্দরগুলিতে পণ্য পরিবহণের গড় বৃদ্ধি ০.৮ শতাংশ। সেখানে শুধু হলদিয়া বন্দরের গড় বৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। সর্বাধিক পণ্য পরিবহণেও রেকর্ড গড়েছে হলদিয়া।’’ কেন্দ্রের জাহাজ মন্ত্রকের রিপোর্টেও এর উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি প্রবীনের। তিনি জানান, গত এক বছরে এই বন্দরে ৪৭ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ হয়েছে। যা গোটা দেশের প্রধান প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলির পণ্য পরিবহণের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে।
এক বছরে গড় বৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানকে সাফল্য বলেই মানছেন হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ, করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউনের সময় দেশজুড়ে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বহু বন্দরে স্বাভাবিক কাজকর্মও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যতিক্রম নয় হলদিয়াও। তবে ক্ষতির হার এখানে তুলনায় কিছুটা কম। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের অন্য বন্দরগুলিতে যেখানে লকডাউন চলাকালীন পণ্য পরিবহণ ৩০ শতাংশ বিঘ্নিত হয়েছে। হলদিয়ায় তা ২৫ শতাংশ।
কী ভাবে এই সাফল্য?
বন্দর কর্তৃপক্ষ এর জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন, শ্রমিক সংগঠনগুলিকে। কারণ, লকডাউনের সময়ে এখানে কাজ বন্ধ হয়নি। প্রবীন বলেন, ‘‘লকডাউনেও বন্দরের কাজ থেমে যায়নি। পুরসভা-সহ স্থানীয় প্রশাসন এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে আগামী দিনে বন্দরের কাজকর্ম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাবে বলেই আমরা আশাবাদী।’’ গত এপ্রিল মাসে লকডাউনের গোড়ায় ৭.২৭ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ করেছে হলদিয়া বন্দরে। এমনকী গত ২০ মে আমপানে প্রবল বিপদের আশঙ্কা ছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায়। ক্ষতি হয়েছিল হলদিয়ায়। তা সত্ত্বেও ওই দিন ২৩টি জাহাজকে বন্দরে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে পণ্য পরিবহণে দেশে প্রথম স্থানে রয়েছে কান্দালা বন্দর। এই বন্দর পণ্য পরিবহণ করেছে ১২২ মিলিয়ন টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পারাদ্বীপ ১১২ মিলিয়ন টন, তৃতীয় স্থানে বিশাখাপত্তনমে ৭২ মিলিয়ন টন, চতুর্থ স্থানে থাকা নভসেবা ৬৮ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ করেছে। এই বন্দরগুলি সমুদ্র বন্দর। তবে হলদিয়া নদীবন্দর। এই বন্দর কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের (অধুনা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্ট) অধীন। কলকাতা বন্দর পণ্য পরিবহণে দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। গত এক বছরে এই বন্দরে ৬৪ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ হয়েছে। এর মধ্যে হলদিয়ার অংশীদারি ৪৭ মিলিয়ন টন। এর আগে হলদিয়া বন্দরে সর্বাধিক পণ্য পরিবহণ হয়েছিল ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে। সে বার ৪৫.২ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবাহিত হয়েছিল।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। আগামী দিনে ইস্পাতের মতো নতুন কার্গো পরিবহণে হলদিয়া বন্দরের বাজার নীতি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলতে পারে।’’ ওই আধিকারিক আরও জানান, কেন্দ্র সরকার হলদিয়া টাউনশিপ নিয়ে পরিকল্পনা পরিবর্তনের কথা ভাবছে।