গত ৩১ মার্চ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হজ হাউসে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল।—ফাইল চিত্র।
ধারণার অচলায়তনের পাথর ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে!
গত চল্লিশ দিন ধরে নিউটাউনের মদিনাত-উল-হুজ্জাজ-এর হজ হাউস আর শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অস্থায়ী ঠিকানা নয়। এই হজ হাউস এখন সেফ হোম। আর সেখানে মিলেমিশে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছেন রণিত দাস, উমা দেবনাথ, কবীরউদ্দিন শেখ, বিভা দে'রা। দূরত্ব বিধি বজায় রেখেই চলছে গল্প-আড্ডা, গানের আসর। সদ্য বসানো টিভিতে পছন্দের সিরিয়াল দেখা চলছে।
নিউটাউনের হজ হাউসে (সেফহোম) আপাতত তিনতলা, চারতলা এবং পাঁচতলা ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচতলাটা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য থাকছে। প্রত্যেকটি তলায় ৬টি করে বড় হল ঘর আছে। সেখানেই থাকছেন সবাই। বিশাল, লম্বা করিডরে চলছে ‘মর্নিং ওয়াক’ ও ‘ইভনিং ওয়াক’।
বঙ্গে করোনা আবহ তার জাল বিস্তারের প্রায় শুরুতেই ৩১ মার্চ কোয়রান্টিন কেন্দ্র হয়েছিল নিউটাউনের হজ হাউসটি। সেখানে থাকছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দিল্লির তবলিগি জমায়েতে ছিলেন। পাঁচটি দেশের মানুষ সেখানে ছিলেন। ওখানে সেফ হোম শুরুর আগে বিদেশি নাগরিকদের কৈখালিতে থাকা হজ হাউসে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে নিউটাউনের হজ হাউসটি এখন সেফ হোম হিসাবে কাজ করছে। সেখানে থাকা মানুষজনের জন্য প্যাকেটবন্দি আমিষ, নিরামিষ খাবার আসছে। কেউ কেউ আবার পেঁয়াজ, রসুনের ছোঁয়াচ এড়ানো খাবারও চাইছেন বলে খবর। তা জোগান দিতে মাঝেমধ্যে একটুআধটু সমস্যায় পড়ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অবশ্য, পেঁয়াজ আর রসুন না খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে না, তা-ও রসিকতার সুরে মনে করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। আর সে শুনে অনেকে আবার মত বদলে ফেলছেন। তাতে ছোঁয়াচ এড়ানো খাবারের বন্দোবস্ত করা থেকে কিছুটা রেহাই পাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মূলত কলকাতা আর দুই ২৪ পরগনার বাসিন্দারাই এখানে থাকছেন। অবশ্য কর্মসূত্রে এই তিন এলাকার মধ্যে থাকলে এই সেফ হোমে জায়গা পাচ্ছেন অন্যরাও।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটির 'ফিডব্যাক ফর্মে’ নিউটাউনের এই সেফ হোমের খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রশংসায় উচ্ছসিত সব বাসিন্দাই। সে তালিকায় যেমন রয়েছেন শহরের রেড ক্রস প্লেসের বাসিন্দা উমা, তেমন আবার নদিয়ার কালিগঞ্জের বাসিন্দা
কবীরউদ্দিনও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এই সেফ হাউসের দৈনিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকাদের সহযোগিতার প্রশংসা করে সেখানে কাটানো দিনগুলি 'স্মরণীয়' বলে মত প্রকাশ করেছেন পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা বিভা। চিকিৎসার বন্দোবস্ত নিয়ে সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা রণিত। এই ফিডব্যাক ফর্মটি হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহার হয়।
সাধারণভাবে, হজ হাউসটি ব্যবহার হয় হজযাত্রীদের জন্য। কিন্তু এখন অতিমারির সময়ে তা আমজনতার চিকিৎসার জায়গা হয়ে উঠেছে, যা আদতে বাংলার প্রতি দিনের সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করছে, তেমনই মত বিভিন্ন অংশের মানুষের।