মা-দিদিদের সঙ্গে চাষে ব্যস্ত সমাপ্তি। ছবি: সুজিত দুয়ারি
কোমরে গামছা পেঁচানো, হাতে পাচন (লাঠি) ধরা বছর বাইশের তরুণীকে এক হাঁটু কাদা ঠেলে গরু সামলাতে দেখলে কে বলবে, ভূগোলে সদ্য অনার্স হয়েছেন সমাপ্তি মণ্ডল।
তাঁর ইচ্ছে, সরকারি চাকরি করবেন। তবে চাষবাস ছাড়তে রাজি নন। শুক্রবার সমাপ্তিকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী। তিনি জানান, সমাপ্তিকে উন্নত কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জাম বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কিসান ক্রেডিট কার্ডের জন্য সমাপ্তিকে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিডিও।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার আনখোলা গ্রামে থাকেন সমাপ্তি। হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে এ বছরই স্নাতক হয়েছেন। চাষের কাজ শিখলেন কী ভাবে? একগাল হাসেন সমাপ্তি। বলেন, ‘‘প্রয়োজন পড়লে মানুষকে সবই শিখে নিতে হয়।’’ বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন বাবা ভোলানাথ। চাষবাস করেই সংসার চালাতেন তিনি। বহু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পরিবারের হাল ধরেন সমাপ্তির মা অঞ্জলি। মায়ের আঁচলের সঙ্গে লেপ্টে থাকা ছোট্ট মেয়েটাও শিখে নিয়েছিল বীজতলা তৈরি, চারা বোনা, মই দেওয়া, লাঙল টানার কলাকৌশল। সমাপ্তির দিদি দীপাও ভূগোলে স্নাতক। মা-বোনের সঙ্গে চাষবাস করেন তিনিও।
সমাপ্তি জানালেন, একবার কলেজের শিক্ষক প্রণবকুমার দাস ক্লাসে পড়া বোঝানোর সময়ে বলছিলেন, এ দেশে মহিলা কৃষিশ্রমিক দেখা যায়। কিন্তু মহিলা চাষির দেখা মেলে কই! সমাপ্তি উঠে দাঁড়িয়ে সে দিন বলেছিলেন, ‘‘স্যর, আমি কিন্তু চাষি।’’
‘কৃষক’ পরিচয় দিতে গর্বিত তরুণী-কণ্ঠ। সমাপ্তি মনে করেন, যে কোনও কাজে মহিলাদের যত্ন, ভালবাসা অনেক বেশি। ফলে চাষবাস বা যে কোনও ক্ষেত্রেই মহিলাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সমাপ্তির কথায়, ‘‘শিক্ষা থাকলে সব কাজই আরও দক্ষতার সঙ্গে করা যায়।’’