রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
পুজোর মুখেই ডাকা হয়েছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। এক দিনের ওই অধিবেশন বসার কথা আজ, সোমবার। কিন্তু আধিবেশনের কার্যসূচি কী হবে, তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। কারণ, মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলে রবিবার রাত পর্যন্ত সম্মতি দেননি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ওই বিল ছাড়া অন্য কিছু এখনও পর্যন্ত সরকার পক্ষের আলোচ্য-সূচিতে নেই! ফলে, আজ সকালের মধ্যে রাজ্যপালের সম্মতি না এলে অধিবেশনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিধানসভার স্পিকারকে।
বিধানসভার গত অধিবেশনেই পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যেই বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত আইনে সংশোধনী আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় বিল ও আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে গেলে রাজ্যপাল আপত্তি করবেন, সেই আশঙ্কা শাসক শিবিরে ছিলই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, বিধানসভায় পেশ করার আগে বিলে সম্মতিই মেলেনি রাজভবনের তরফে।
সূত্রের খবর, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে দেখা করেছেন। রাজ্যপাল ওই বিলটি সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের কথা বললেও নির্দিষ্ট করে কোনও আলোচনা হয়নি। অধিবেশনের আগে আজ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে সরকার পক্ষকে। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত। পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন সরাসরিই বলেছেন, ‘‘সংবিধানে রাজ্যপালের যে ভূমিকা নির্দিষ্ট আছে, তিনি তা পালন করছেন না। সরকার সংবিধান বহির্ভূত কোনও কাজ করলে তিনি তখন আপত্তি করতেই পারেন। কিন্তু এটা প্রত্যাশিত নয়।’’
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারের তরফে আমাকে এখনও বিল নিয়ে রাজ্যপালের আপত্তির কথা জানানো হয়নি। অধিবেশন ডাকা রয়েছে। তাই তা বসবে। তার পরে পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’
মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার গোড়াতেই বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বেতনের বর্ধিত অংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের মঞ্চকে আইনি লড়াইয়ের সহায়তার জন্য দিয়ে দেবেন। বিধানসভার এই অধিবেশন নিয়েও প্রথমে আগ্রহ ছিল না বিজেপি শিবিরের। কারণ, পুজো উদ্বোধনে আজই রাজ্যে আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। তাঁর সঙ্গেই ব্যস্ত থাকতে হবে বিরোধী দলনেতাকে। তবে পরে বিরোধী দল তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা সকালে বিধানসভায় সকলকে (বিধায়ক) ডেকেছি। আমরা ভিতরে ঢুকব। জোরালো ভাবে এর বিরোধিতা করব।’’ প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সূচি অনুযায়ী শাহের আজ কলকাতায় পৌঁছনোর কথা বিকালে। বিরোধী দলনেতা বিধানসভায় যাওয়ার কথা জানালেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই বিশেষ অধিবেশনে থাকছেন না। পায়ে ব্যথা ও সংক্রমণের কারণে তিনি আপাতত ঘরবন্দি। পুজো উদ্বোধনও সারছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে।