বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘেরাওমুক্ত করতে। আচার্য হয়ে জগদীপ ধনখড় কেন এক জন বিজেপি নেতাকে উদ্ধার করতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন, তা নিয়ে সে সময় পড়ুয়ারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই ক্ষোভ যে কার্যত আগ্নেয়গিরির চেহারা নিয়েছে, তা সোমবার যাদবপুরে পৌঁছনোর পর ভালই টের পেলেন আচার্য।
এ দিন দুপুর ২টোয় যাদবপুরে রাজ্যপালের কনভায়ের ঢোকামাত্রই আটকালেন পড়ুয়ারা। দেখানো হল কালো পতাকা। স্লোগান উঠল, ‘গো ব্যাক’। এমনকি রাজ্যপালের গাড়ি ঘিরে ধরেও চলল প্রবল বিক্ষোভ। সে সময় যাদবপুর ক্যাম্পাস এতটাই উত্তাল হয়ে ওঠে, যে ক্যাম্পাস ছাড়তে গাড়ির চালককে এক নম্বর গেটের দিকে যেতে নির্দেশ দেন ধনখড়।
কিন্তু তার পরই নাটকীয় মোড় নেয় পরিস্থিতি। ভিড়ের মধ্যে থেকে এক ছাত্রকে ডেকে কথা বলতে চান আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেই শুরু! তার পর বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারাই তাঁকে মানববন্ধন করে অরবিন্দ ভবনে নিয়ে গেলেন। তা-ও আবার তৃণমূল সমর্থক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতিরোধ ভেঙে।
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিলেও ‘কাল আসছি’ বলে যাদবপুর ছাড়লেন রাজ্যপাল
সোমবার যাদবপুরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —নিজস্ব চিত্র।
পড়ুয়া এবং আচার্যের মধ্যে যে একটা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছিল, এই সুযোগে তা বোঝানোর কোনও খামতি রাখেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি যে কোনও দলের হয়ে কাজ করেন না, সে কথাও শোনা গেল তাঁর গলায়। ধনখড় বলেন, “আমি পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজ করি। শিরদাড়া সোজা রেখে চলি। কোনও সরকারের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করি না। আমি সংবিধানের প্রতিনিধি। পড়ুয়াদের জন্য সব সময় আলোচনার রাস্তা খোলা। যে কোনও সময়ে আলোচনা করা যেতেই পারে।”
আরও পড়ুন: পিকচার অভি বাকি হ্যায়, কলকাতায় দাঁড়িয়ে মমতাকে হুঁশিয়ারি নড্ডার
পড়়ুয়াদের রাজভবনে আসার জন্যও আমন্ত্রণ জানান ধনখড়। সেই সঙ্গে পড়ুয়াদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। তখনও অবশ্য তৃণমূল সমর্থক শিক্ষককর্মীরা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে রাজ্যপালকে নানা কটাক্ষ করতে থামেননি। ওই পরিস্থিতিতেই অরবিন্দ ভবনের স্টাফরুমে কিছু ক্ষণ সময় কাটিয়ে, কোর্ট মেম্বারদের সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্যপাল। কেন তাঁকে যাদবপুরে আসতে হল, সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেন। শেষে তাঁদের বলে যান, ‘‘আমি আগামিকালের সমাবর্তনে কিন্তু আসছি।’’
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে থাকবেন বলে রাজ্যপাল নিজেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর আর থাকা হয়নি। তবে কিছুটা হলেও বরফ গলেছে বলে মনে করছেন পড়ুয়াদের একাংশ। মঙ্গলবার ফের যাদবপুরে আচার্য আসবেন কি না, তিনি এলে ফের বিক্ষোভের মুখে পড়বেন কি না, ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে সেই আলোচনাই।