C V Ananda Bose

বাংলায় পড়ুয়াদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হবে উপাচার্য, দেশে প্রথম, রাজ্যপালের মন্তব্যে বিতর্ক

রাজভবনের তরফ থেকে পরে দাবি করা হয়, যে সব পডুয়া যাঁরা স্নাতকোত্তরে খুব ভাল করেছেন, পড়াশোনা এবং গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্য থেকে অন্তর্বর্তী (ইন্টারিম) উপাচার্য করা হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৬:১৫
Share:

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

পড়ুয়াদের মধ্য থেকে উপাচার্য (স্টুডেন্ট ভাইস চ্যান্সেলর) পেতে চলেছে এ রাজ্য। দেশে প্রথম। শুক্রবার সকালে কালিম্পং কলেজে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে এমনই দাবি করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার বাংলা এক জন পড়ুয়া-উপাচার্য পাবে। উজ্জ্বল এবং সেরা পড়ুয়া। তিনি হয়তো গবেষণা করছেন। তবে অতি সত্বর উপাচার্য হবেন। ভারতে প্রথম।’’ রাজভবনের তরফ থেকে পরে দাবি করা হয়, সেই সব উজ্জ্বল পডুয়া যাঁরা স্নাতকোত্তরে খুব ভাল করেছেন, পড়াশোনা এবং গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্য থেকে অন্তর্বর্তী (ইন্টারিম) উপাচার্য করা হতে পারে। যদিও ‘পড়ুয়া-উপাচার্য’ এবং পড়ুয়াদের মধ্য থেকে ‘অন্তর্বর্তী উপাচার্য’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে শিক্ষা জগতের অনেকে। বেধেছে বিতর্ক।

Advertisement

রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘কে, কোথায়, কী বলেছেন সে সম্পর্কে আমার কাছে এখনও নির্দিষ্ট খবর নেই। তবে পড়ুয়াদের উপাচার্য করার ভাবনা প্রসঙ্গে এটুকুই বলার যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উপাচার্য পদে নিয়োগের মাপকাঠি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তাতে বলা আছে, যিনি উপাচার্য হবেন, তাঁর অন্তত দশ বছর অধ্যাপক (প্রফেসর) পদে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যিনি দশ বছর অধ্যাপক পদে থাকবেন, তাঁর সামগ্রিক পড়ানোর অভিজ্ঞতা প্রায় কুড়ি বছরে গিয়ে দাঁড়াবে।’’ পক্ষান্তরে, রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যপালের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে পারব না। তবে এ রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার যে হাল হয়েছে, শাসক দলের তাঁবেদার লোকজনকে যে ভাবে উপাচার্যের পদে বসানো হয়েছে, তার চেয়ে এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা ভাল বলে মনে হয়।’’

ইউজিসির তরফে উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য উচ্চ শিক্ষায় বিশিষ্টজনদের নিয়ে ‘সার্চ কমিটি’ গড়ার কথা বলা রয়েছে। বলা হয়েছে, উপাচার্য পদে তিন-পাঁচ জনের প্যানেলে প্রার্থী বাছার ক্ষেত্রে সার্চ কমিটিকে সম্ভাব্য প্রার্থীর দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা-প্রশাসন সম্পর্কে যথাযথ অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না, তাতে গুরুত্ব দিতে হবে। সে সূত্রেই প্রশ্নে উঠেছে গবেষণারত পড়ুয়াদের আদৌ তেমন অভিজ্ঞতা থাকা সম্ভব কি না। উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন উপাচার্য বলেন, ‘‘ছাত্র হিসাবে সেরা হলেও, যাঁরা পড়ুয়া তাঁদের কী করে উপাচার্য করা যাবে? এমন কথার মানে বুঝতে পারছি না!’’

Advertisement

‘পড়ুয়া-উপাচার্য’ প্রসঙ্গ টানার আগে এ দিন শিক্ষা ক্ষেত্রকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সমাজকে হিংসামুক্ত করার বার্তা দেন রাজ্যপাল। পড়ুয়ারা দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাক্ষেত্র আর হিংসামুক্ত সমাজ চান কি না, তা জানতে চান। কালিম্পং কলেজ অডিটোরিয়ামের দর্শকাসনে বসা ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে কিছুটা নীরব থাকায় রাজ্যপাল তাঁদের উচ্চস্বরে উত্তর দিতে বলেন। সবাই ‘হ্যাঁ’ বলার পরে, তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তাতে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন তৈরি করা। একই সঙ্গে দরকার হিংসামুক্ত সমাজ। এ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে।’’

চলতি সপ্তাহে রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের ১২ জন উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে রাজ্যপাল তথা আচার্য কয়েকটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটি। সব ধরনের দুর্নীতি দমন করতে ওই কমিটি কাজ করবে। শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য থাকবে একটি কমিটি। শিক্ষার উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে নজরদারির জন্য থাকবে আর একটি কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ‘কো-অর্ডিনেশন সেন্টার’ হিসাবে কমিটি থাকবে। নতুন শিক্ষা নীতি চালু করতে থাকবে ‘টাস্ক ফোর্স’।

বাংলা সেরা ‘এডুকেশনাল হাব’ হয়ে উঠবে, বাংলার পড়ুয়ারা বিশ্বসেরা হবেন এবং বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে সেরা হয়ে উঠবে— এ দিনও এই ভাবনার কথা মনে করিয়ে দেন সিভি আনন্দ বোস। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি স্মরণ করেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার পঙ্‌ক্তি— ‘বাট টু ইয়াং ওয়াজ় ভেরি হেভেন’। রবীন্দ্রনাথের ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ভারতের ভবিষ্যৎ আপনারাই ঠিক করবেন।’’ কালিম্পং থেকে বিকেলে রাজ্যপাল সমতলে নেমে আসেন। পরে, পৌঁছন কোচবিহারে। আজ, শনিবার সেখানে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement