রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ফাইল চিত্র।
রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী সার্চ বা সন্ধান কমিটির পেশ করা তিনটি নামের তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বেছে নেন রাজ্যপাল। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অন্য রকম কিছু ঘটতে চলেছে। সেখানে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সন্ধান কমিটির তৈরি তালিকার তিন জনের সঙ্গেই সরাসরি কথা বলতে চেয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এ ভাবে তালিকাভুক্ত তিন জনের সঙ্গে রাজ্যপালের সরাসরি কথা বলার নজির নেই বলে জানাচ্ছে শিক্ষা মহল। শিক্ষা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে কোনও রকম আপত্তি জানানো হয়নি।
রাজ্যপাল বোস রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের নিয়ে একটি বৈঠকেরও ডাক দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ১৭ জানুয়ারি ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিবেরও থাকার কথা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাছাইয়ে সন্ধান কমিটি যে-তিন জনের নাম সুপারিশ করেছে, ১৮ জানুয়ারি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্যপাল। তার পরেই তিনি উপাচার্য হিসেবে এক জনকে বেছে নেবেন বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে সরে যেতে হয়। সেই থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই। সুবীরেশের গ্রেফতারির পরে ওমপ্রকাশ মিশ্রকে সেখানে অস্থায়ী উপাচার্য করা হয়েছিল। তাঁকে আরও চার সপ্তাহ কাজ চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল।
শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আমলে সন্ধান কমিটির তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজ্যপালের সরাসরি কথা বলার ঘটনা ভাবাই যেত না। কারণ, ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধ এক সময় চরমে উঠেছিল। ধনখড় রাজ্যপাল তথা আচার্য থাকাকালীন শিক্ষা বিষয়ক বৈঠকে উপাচার্যেরা হাজির হননি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সরকারের তরফে নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উপাচার্যেরা সরাসরি ধনখড়ের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এমনকি গত জুনে রাজ্যপালের বদলে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য-পদে আনার বিল বিধানসভায় পাশ করিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। সেটি অবশ্য এখনও কার্যকর হয়নি। সম্মতির অপেক্ষায় বিলটি রাজভবনে পড়ে আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সম্মতি ‘ঠিক সময়ে’ না-পাওয়ায় উচ্চশিক্ষা দফতর সেই সময়ে নিজেদের মতো করেই উপাচার্য নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ করেছে। সেই বিষয়টিও এখন আদালতে বিচারাধীন।
শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও স্থায়ী উপাচার্য নেই। পূর্বতন রাজ্যপাল ধনখড়কে এড়িয়ে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপাচার্যের পদে দ্বিতীয় বার বহাল করেছিল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, রাজ্য সরকারের এ ভাবে উপাচার্য পুনর্নিয়োগের এক্তিয়ার নেই। সেই কারণে উপাচার্যের পদ থেকে সোনালিকে সরে যেতে হয়েছে।