(বাঁ দিকে) রাজভবনের বিবৃতি। ছবি: এক্স। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)।— ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্ত করতেই পারে না পুলিশ। সেই এক্তিয়ার তাদের নেই। রাজভবনের বিবৃতিতে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংবিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজভবনের কর্মীদের এই ঘটনা প্রসঙ্গে কোথাও মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন রাজ্যপাল স্বয়ং। জানিয়েছেন, এ বিষয়ে রাজভবনের সঙ্গে যুক্ত কেউ কোথাও কোনও বিবৃতি দিতে পারবেন না।
রবিবার রাজভবনের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে রাজ্যপাল বোস লিখেছেন, ‘‘সংবিধানের ৩৬১ (২), (৩) ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যপাল নিজের পদে থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে দেশের কোনও আদালতে ফৌজদারি তদন্তপ্রক্রিয়া চলতে পারে না। তাঁকে গ্রেফতার করা বা জেলে পাঠানোও যায় না। ফলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পুলিশ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। তারা রাজভবনের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে। এমনকি, পুলিশ রাজভবনের সিসি ক্যামেরার টিভি ফুটেজও চেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সংবিধানের রক্ষাকবচ থাকায় পুলিশের এই তদন্তের এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আসলে পুলিশ এটা করতে পারে না। তাদের এই তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট কোনও আদালতে গৃহীত হতে পারে না। এটি সংবিধানের অবমাননা। কারণ, সংবিধানে পুলিশকে এ বিষয়ে কোনও এফআইআর করে তদন্ত করতেই নিষেধ করা হয়েছে।’’
রাজভবনের সমস্ত ধরনের সব কর্মীকে এই ঘটনায় পুলিশের কোনও প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘কেউ অনলাইন বা অফলাইন মাধ্যমে, ফোনে বা অন্য কোনও ভাবে এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে পারবেন না। রাজভবনের স্থায়ী, অস্থায়ী, আংশিক সময়ের কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।’’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানান তিনি। রাজ্যপাল সে দিন রাতে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘সত্য প্রকাশ্যে আসবেই। কৌশলী কোনও আখ্যানের সামনে আমি মাথা নত করতে রাজি নই। ভোটের বাজারে যাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য তাঁর বদনাম করেছেন, ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন। বাংলায় দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে আমার লড়াই কেউ থামাতে পারবেন না।’’
এর পরে অন্য একটি বিবৃতিতে রাজভবনে পুলিশ ঢোকা নিষিদ্ধ করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও রাজভবনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছিলেন চন্দ্রিমা। রাজ্যপাল বোস জানিয়ে দেন, চন্দ্রিমার বিরুদ্ধে তিনি আইনি পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছেন। তাঁর সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে থাকবেন না বলেও জানান। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরের দিন কেরলে চলে যান রাজ্যপাল। বর্তমানে সেখানেই আছেন। এর মাঝে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কী করণীয়, তা জানতে আইন এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় লালবাজার। রাজভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও চাওয়া হয়। তার পরেই রবিবার এল রাজ্যপালের বিবৃতি।