কুণাল ঘোষের পাড়ার পুজোয় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। নিজস্ব চিত্র।
অষ্টমীর সকালে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাড়ার পুজোয় হাজির হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আদ্যোপান্ত বাঙালি সাজে সুকিয়া স্ট্রিটের রামমোহন সম্মিলনীর পুজোয় হাজির হয়েছিলে রাজ্যপাল। ঘটনাচক্রে, এই সুকিয়া স্ট্রিটেই কুণালের বাড়ি। আর রামমোহন সম্মিলনী পুজোর সঙ্গেও তিনি জড়িত।
অষ্টমীর সকালে রাজ্যপাল সুকিয়া স্ট্রিটে হাজির হতেই কুণাল তাঁকে স্বাগত জানান। মণ্ডপে ঢুকে বেশ কিছু ক্ষণ পুজো দেখেন রাজ্যপাল। কুণালের সঙ্গে তাঁকে আলাপচারিতা করতেও দেখা গিয়েছে। তার পর কুণালকে পাশে রেখেই অষ্টমীর অঞ্জলি দেন রাজ্যপাল। কিছু কথাও বলেন সেখানে। রাজ্যপালকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করা হয়। রাজ্যসঙ্গীতও গাওয়া হয়।
রামমোহন সম্মিলনীর পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকের বক্তব্য, রাজ্যপাল সম্ভবত প্রথম বার অঞ্জলি দিলেন। কারণ, কত বার ফুল হাতে নিতে হয়, কত বার মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয় এবং কখন তা প্রতিমার উদ্দেশে অর্পণ করতে তা রাজ্যপালের জানা ছিল না। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “রাজ্যপাল এসেছিলেন। অঞ্জলি দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই রাজভবনে গিয়েছিলেন কুণাল। তিনি রাজভবনে যেতেই নানা রকম জল্পনা শুরু হয়ে যায়। প্রায় ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে কুণাল জানিয়েছিলেন, ওই সাক্ষাৎ ছিল ব্যক্তিগত। তবে একইসঙ্গে তিনি জানান, অতীতে রাজ্যপাল যখনই রাজ্য সরকারের কাজের পথে ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, শাসকদলের মুখপাত্র হিসেবে তিনি তাঁর সমালোচনা করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।
ওনামের সময়ে রাজ্যপাল কুণালকে মিষ্টি এবং উপহার পাঠিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে বাঙালি কুণাল তাঁর রাজ্যের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজোয় উপহার দিতে চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই কারণেই রাজ্যপাল কুণালকে রাজভবনে আহ্বান করেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই সাক্ষাতের সময় রাজ্যপালকে নিজের পাড়ার পুজোয় আমন্ত্রণও জানিয়ে এসেছিলেন কুণাল। সেই কথা রাখতেই অষ্টমীর দিন সকালে কুণালের পাড়ায় হাজির হন রাজ্যপাল বোস।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) কুণালের জোড়া পোস্ট নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে দিনভর আলোচনা চলেছে। প্রথম পোস্টে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কুণাল লেখেন, ‘‘রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থল দিল্লি। অভিযোগকারিণীর চেন্নাই, কোচি, দিল্লিতে যাতায়াত আছে। অভিযুক্ত সাংবিধানিক রক্ষাকবচে আছেন। নগরপাল অভিযোগের চিঠি-সহ ফাইল নবান্ন সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন। আপাতত এইটুকু।’’ পরের পোস্টে বিকেলের দিকে কুণাল লিখেছিলেন, ‘‘রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় এক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে যিনি ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছেন, তিনি একজন কৃতী মহিলা, ওড়িশি নৃত্যের বিশিষ্ট শিল্পী। মালয়ালম ভাষাতেও পারদর্শী। অভিযুক্ত ব্যক্তির পদ সাংবিধানিক ভাবে সুরক্ষিত। তাই পুলিশি পদক্ষেপে আইনি বাধা। আপাতত এটুকুই।’’ সেই ব্যক্তি কে, কী তাঁর পরিচয়, কী ধরনের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তাঁর রয়েছে— এ সবের কিছুই খোলসা করেননি কুণাল। তবে সেই থেকেই বিবিধ জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের রাজনীতিতে। শাসকদল তো বটেই, মুখ্য বিরোধীদল বিজেপির মধ্যেও জোর আলোচনা শুরু হয়।
ঘটনাচক্রে তার পর দিনই অর্থাৎ সোমবার (১৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতা সফরে আসেন। সে দিন রাভবনেই ছিলেন রাজ্যপাল বোস। যে সময়ে শাহ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন, সেই সময় রাজভবনে কুণালের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত’ সাক্ষাৎ করছিলেন রাজ্যপাল। যা নিয়ে নানা জল্পনাও শুরু হয়।