দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন পরামর্শই দিয়ে যান, রাজ্য বিজেপির মুখে আবার ফিরে এল ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবি! আসানসোলের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং এই কারণে ৩৫৬ ধারা জারি করা উচিত বলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে দাবি জানাল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল।
শুভেন্দুদের ওই দাবির পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল ধনখড়। বিজেপির প্রতিনিধিদলের অভিযোগের কথা উল্লেখ করেই ভিডিয়ো বিবৃতিতে তিনি বুধবার বলেছেন, ‘‘আসানসোলের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ক্লিপিং আমাকে দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে জেহাদ ঘোষণার কথা বলেছেন, তা উদ্বেগজনক। তাঁর কাছে আবেদন, এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিন এবং আমার বক্তব্যের উত্তর দিন।’’ শুভেন্দুদের কড়া জবাব দেওয়ার পাশাপাশিই রাজ্যপালের এই ভূমিকাকে বিজেপির দলদাসত্ব এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বলে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি নিয়ে মঙ্গলবারই রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিল মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। ওই বিষয়ে তাঁর কী করণীয়, তৃণমূল নেতাদের কাছেই জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। আর এ দিন কালক্ষেপ না করে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর চিঠি দেওয়ার ঘটনায় ব্রাত্য বলেন, ‘‘আমরা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের বক্তব্য জানানোর আগেই রাজ্যপাল ক্রমাগত মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ক্ষণ অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন। আর এ দিন দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রী কোনও রাজনৈতিক সভা থেকে কী মন্তব্য করেছেন, সেটা নিয়ে উনি বিবৃতি দিচ্ছেন! রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান। কিন্তু তিনি নিজেকে রাজনৈতিক বিচারকের জায়গায় নামিয়ে আনছেন! অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’
রাজভবন থেকে বেরিয়ে এ দিন শুভেন্দু বলেন, ‘‘জেহাদ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ধর্মযুদ্ধ। তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের সঙ্গে জেহাদের কী সম্পর্ক? বিজেপির কর্মী-সমর্থক এবং রাজ্যের যে দু’কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর জেহাদের কথা শুনে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরাও উদ্বিগ্ন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জেহাদের ভূমিকা সিএএ-র সময়ে, নির্বাচন পরবর্তী হিংসার সময়ে আমরা দেখেছি। নুপূর শর্মার ঘটনায় নানা জায়গায় চার দিন ধরে তাণ্ডব চলতে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঠেকাতে এই সরকারকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করুন, এই দাবি আমরা সাংবিধানিক প্রধানের কাছে করেছি।’’
যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘জেহাদ শব্দটা আমরা নানা সময়েই ব্যবহার করি। তার মধ্যে কোনও ধর্মীয় ভাবনা থাকে না। নর্দমার পাঁক, ভাগাড় ঘাঁটা এ সব শুয়োর আর শকুনেরা করে থাকে! বিজেপি নেতারা সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা তৈরির ঘৃণ্য চেষ্টা করছেন।’’ সেই সঙ্গেই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজ্যপালের দুই ভূমিকার তুলনা টেনে কুণালের আরও মন্তব্য, ‘‘একটা নাটক হয়েছে রাজভবনে। যার প্রযোজক ও পরিচালক রাজ্যপাল। বাকিরা সব পুতুল! আগের দিন আমাদের কথা শুনে উনি বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। এ বার বিজেপির দলদাস রাজ্যপাল ওই দলের নেতাদের বার্তা দিতে চাইছেন যে, তিনি তাঁদের সঙ্গেই তৃণমূলের নেতারা রাজভবনে গেলে রাজ্যপাল যেন একতরফা বয়ান না দিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন, সেই চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন কুণাল।
বিজেপির দাবি প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘৩৫৬ ধারার দাবি একেবারেই অগণতান্ত্রিক। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ে বহু বার এই দাবি করতেন। সেই দলে থেকেই তালিম নিয়ে শুভেন্দু এখন অন্য দলে গিয়ে একই দাবি করছেন। আমরা তখনও এর বিরোধিতা করেছিলাম, এখনও করছি।’’