প্রতীকী ছবি।
সময়মতো করোনার প্রতিষেধক নিয়ে সুরক্ষিত থাকার জন্য গ্রামবাসীদের মতো প্রান্তিক স্তরের মানুষেরও আগ্রহ-উদ্দীপনা যথেষ্ট। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা টিকা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারছেন না। রাজ্য সরকারের হাতে হাত মিলিয়ে এ বার সেই কাজেই গতি আনতে চাইছে লিভার ফাউন্ডেশন ও কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক।
আপাতত দার্জিলিং, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে শুরু হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন অ্যাক্সেস ইনিশিয়েটিভ’ বা 'ভাই' প্রকল্প। লিভার ফাউন্ডেশন ও কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, সংগঠনগত ভাবে তাঁরা মনে করেন, প্রতিষেধকের একমাত্র উৎস হওয়া উচিত সরকারই। এবং মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে সরকার দায়বদ্ধ। সেই কাজে দক্ষতা ও দ্রুততার মেলবন্ধন ঘটিয়ে গ্রামের বাসিন্দা ও প্রান্তিক স্তরের মানুষের কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পে যুক্ত হতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিজিৎরা। বুধবার তাতে সিলমোহর পড়েছে।
"প্রতিষেধক প্রদান থেকে শুরু করে এ ক্ষেত্রে সবই করবে রাজ্য সরকার। আমরা সেই কাজকে সুচারু ভাবে কিছু অংশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করব,’’ বলেন অভিজিৎ। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে, 'ভাই' প্রকল্পে সত্তরোর্ধ্বদের এবং শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতিষেধক পেতে সাহায্য করা হবে। টিকা কেন্দ্র খোলা হবে বাড়ির কাছেই কোনও কমিউনিটি হল, স্কুল বা অন্যত্র। হাঁটাচলায় অক্ষম মানুষকে গাড়িতে তুলে সেখানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব লিভার ফাউন্ডেশন ও কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের। এমনকি টিকা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কোনও অবসরপ্রাপ্ত নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীকে খুঁজে বার করা হচ্ছে। তাঁদের যাবতীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এ ছাড়াও অন্য সব পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করবে উদ্যোক্তারাই। প্রতিষেধকের লভ্যতা অনুসারেই টিকা কেন্দ্রে সরকার শুধু টিকা সরবরাহ করবে।
কী ভাবে উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা হবে? স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে-সব জেলায় প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে, সেখানকার স্থানীয় কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেই যৌথ ভাবে এই কাজ করা হচ্ছে। সকলে মিলে প্রথমে সত্তরোর্ধ্ব এবং শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের তালিকা তৈরি করা হবে। তার পরে সেই তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হবে টিকা। অভিজিৎ জানাচ্ছেন, 'ভাই' প্রকল্প প্রথমে শুরু হচ্ছে দার্জিলিঙে। অতঃপর বর্ধমানের দুই জেলায় ঠিকমতো টিকাকরণের পরে আগামী ছ’মাস ধরে রাজ্যের অন্যান্য জেলায় এই কাজ চলবে। তাঁর কথায়, "তিনটি জেলায় আপাতত পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে বোঝা যাবে, কী ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। তার পরে কাজের গতি আরও বাড়ানো হবে।" এক-এক দিনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হবে 'ভাই' কর্মসূচি।
করোনার বিষয়ে আলোচনা শহরকেন্দ্রিক হলেও গ্রামের মানুষের বিপদ কিন্তু এখনও কাটেনি বলে মত চিকিৎসকদের। তাই সেই সব মানুষের কাছেও সরকারের কাজ খুব সহজে পৌঁছে দিতে তাঁরা বদ্ধপরিকর বলে জানাচ্ছেন অভিজিৎরা।