প্রতীকী ছবি।
চলতি বছরের পুরভোটের পরে, পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী বছর। তার উপরে শিল্প সম্মেলন আসন্ন। এই অবস্থায় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে কমবেশি ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার।
নবান্নের অভিযোগ, সড়ক যোজনা খাতে টাকা পাঠাচ্ছে না কেন্দ্র। রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা বেশ খারাপ। অথচ বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ রাস্তার বকেয়া কাজ শেষ করার ‘চাপ’ রয়েছে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে। বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পরিকাঠামো ক্ষেত্রটি অবহেলিত হতে পারে। তার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামীণ পরিকাঠামোর বকেয়া কাজগুলি শেষ করতে না-পারলে সমস্যা বাড়তে পারে। এই নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের চাপও রয়েছে বিস্তর। এই অবস্থায় কেন্দ্রের ‘ভরসা’ ছেড়ে রাজ্যকেই বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, “বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সেই কাজে তেনে কখনও ঘাটতি হতে দেননি। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের উন্নয়নের কাজ যেন বিঘ্নিত না-হয়।”
গত দু’বছরে আমপান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় প্রবল ধাক্কা দিয়েছে। তার উপরে ছিল বারংবার বন্যা-পরিস্থিতির আঘাত। ফলে গ্রামীণ পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটের। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৮৫৩৫ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। তা মেরামত করতে গেলে শুধু গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পের আওতায় অন্তত ১২৭২ কোটি টাকা খরচ ধরে রাখতে হবে। রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রের কাছ থেকে এই খাতে কোনও অর্থ পাওয়া যায়নি। ফলে ব্যবস্থা যা করার করতে হচ্ছে রাজ্যকেই। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট বরাদ্দ থেকে ৪৭২ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। তা দিয়ে প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা সারানো গিয়েছে। পাশাপাশি, গ্রামীণ সড়ক যোজনার আওতায় ৫৬টি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। তার মধ্যে ১২টি সেতুর কাজ শেষ।
গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) থেকে কিছু দিন আগে বিভিন্ন জেলা পরিষদকে মোট ১৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাতে এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ রাস্তা মেরামত করা হবে। কিন্তু এখনও প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার রাস্তা সারানো বাকি। নতুন অর্থবর্ষের (২০২২-২৩) প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-মে) মধ্যে এই কাজ সেরে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে রাজ্য।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই জানাচ্ছেন, আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের নির্ধারিত কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। গ্রামীণ সড়ক বা তেমন স্থায়ী পরিকাঠামোর মেরামতিতে দীর্ঘসূত্রতা মানুষের কাছে ভাল বার্তা পাঠায় না। তাই অর্থসঙ্কট সত্ত্বেও পরিকাঠামো উন্নয়নে কোনও গড়িমসি চাইছে না নবান্ন। ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচিতে এই দফায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে গ্রামীণ রাস্তার মোট পরিমাণ প্রায় ১,৩০,১৩৩ কিলোমিটার। তার মধ্যে ২০১১ সালের মে থেকে এখনও পর্যন্ত ১,০০,৪২৭ কিমি রাস্তা হয়েছে।