কর্পোরেট ধাঁচের কাচে মোড়া অ্যান্টিচেম্বার। কিন্তু সেটা পুরনো জামাকাপড়ের পেটিতে ভর্তি! এমন বিসদৃশ সহাবস্থান দেখেই সন্দেহ হয়েছিল সিআইডি-র তিন গোয়েন্দার। জামাকাপড় ঘাঁটতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এল সোনা ও হিরের গয়না!
বৃহস্পতিবার রাতে ভবানীপুরে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোর-এর একটি শপিং মলে তল্লাশি চালাতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে গোয়েন্দাদের। সিআইডি জানিয়েছে, শপিং মলের তেতলার ওই ঘর থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোগ্রাম সোনা ও হিরের গয়না মিলেছে। পাশে ওই সংস্থারই একটি গয়নার দোকান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৪০ কিলোগ্রামেরও বেশি রুপোর গয়না। ওই সব গয়নার বাজারদর কয়েক কোটি টাকা বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, এ দিন দুপুর থেকেই সিআইডি-র দুই কর্মীকে ওজনযন্ত্র আর খাতা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়।
দুপুরে ওই শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, সিআইডি-র ১২ জনের দল তেতলায় আইকোরের গয়নার দোকান এবং ওই লগ্নি সংস্থার কর্ণধার অনুকূল মাইতির অ্যান্টিচেম্বারে তল্লাশি চালাচ্ছে। নিয়ে আসা হয়েছে ইতিমধ্যেই গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া ওই সংস্থার দুই পলাতক ডিরেক্টর ও এজেন্ট সমর মোস্তাফি আর অরিজিৎ মালাকারকেও। গয়না উদ্ধার করার পরে গোয়েন্দারা ওজন করে খাতায় টুকে রাখছেন। তল্লাশি চালাতে চালাতেই এক সিআইডি অফিসার স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘উফ! যেন যখের ধন। শেষই হচ্ছে না।’’
ওই অ্যান্টিচেম্বারের মালিক কে?
সিআইডি জানায়, চেম্বারটি আইকোরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনুকূলের। প্রতারণার অভিযোগে গত এপ্রিলে তাঁকে গ্রেফতার করেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। ধরা পড়ার কিছু দিন আগে পর্যন্ত নিয়মিত ওই চেম্বারে বসতেন অনুকূল। এখন তিনি জেল-হাজতে। গোয়েন্দারা সংস্থার এমডি-কে গ্রেফতার করলেও ওই সংস্থার ভবানীপুরের মলটি খোলাই আছে। সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা চললেও ওই শপিং মল কেন খোলা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এক সিআইডি-কর্তা জানান, ওই মল বন্ধ করার জন্য আদালতে আর্জি জানানো হবে।
কী ভাবে ওই চেম্বারে এত সোনা-হিরের সন্ধান পেলেন গোয়েন্দারা।
ভবানী ভবনের খবর, গত ১ জুন ওই শপিং মলের কাজকর্ম দেখতে গিয়ে গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হন সংস্থার দুই ডিরেক্টর সমর ও অরিজি়ৎ। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই দু’জন জেরার মুখে জানান, অনুকূল ওই চেম্বারে বসে সোনা ও হিরের গয়না দেখিয়ে তাঁদের নানান আশ্বাস দিতেন। একই ধরনের আশ্বাসের কথা এজেন্টদের কাছ থেকেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। এক অফিসার বলেন, ‘‘এজেন্ট থেকে আমানতকারী, কেউ সংস্থার আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুললেই অনুকূল তাঁদের ওই গয়নার একাংশ দেখিয়ে আশ্বস্ত করতেন। বলতেন, সংস্থা যে আর্থিক দিক থেকে ভাল অবস্থায় রয়েছে, এই সম্পত্তিই তার প্রমাণ।’’ অনেকের থেকে এই সোনা-হিরের কথা শুনেই সন্দেহ হয়েছিল তদন্তকারীদের। সেই সূত্রেই ওই শপিং মলে হানা দিয়েছিলেন তাঁরা।
বিপুল পরিমাণ গয়না বাজেয়াপ্তর পরে কার্যত মাথায় হাত সিআইডি-কর্তাদের। তাঁদের চিন্তা, এত হিরে-জহরত রাখা হবে কোথায়? অন্য উপায় না-পেয়ে ওই গয়না রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। আইকোরের লেনদেনের নথি উদ্ধারে একটি কম্পিউটারও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
বেলঘরিয়া থানায় আইকোরের নামে একটি প্রতারণার অভিযোগ হয়। তার ভিত্তিতেই এ-পর্যন্ত অনুকূল-সহ আইকোরের ছয় কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনুকূলের স্ত্রী-সহ অন্য ছয় ডিরেক্টর পলাতক। সিআইডি-র খবর, খড়দহ থানায় আইকোরের নামে আরও একটি মামলা রয়েছে। সেটিতেও অনুকূলকে হেফাজতে আনার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। ওই মামলায় সমর ও অরিজিৎকে হেফাজতে নিয়েছেন তাঁরা।