প্রতীকী ছবি।
এসেছেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হাল খতিয়ে দেখতে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে চলছে পরিদর্শন। কথায় কথায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সামনে পূর্ব মেদিনীপুরের এক তরুণী বললেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি চাকরি কোথায় যে চাকরি পাব!’’
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রীছাত্রীদের পাশের হার যে জেলায় ৯৯ শতাংশ টপকে গিয়েছে, সেই জেলার তরুণীর এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা হতবাক হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরাও। বিষয়টি জানাজানির পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে পটাশপুর-২ ব্লকে যান। পঁচেট পঞ্চায়েতে পুরুষোত্তমপুর গ্রামে আলোরানি মাইতির বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। ওই পরিবারেরই সদস্য সুমিত্রা মান্নার সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। হিন্দিতে জানতে চান, তিনি পড়াশোনা করেন কি না। উত্তরে সুমিত্রা বাংলাতেই জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এর পরে এক প্রতিনিধি জানতে চান, সুমিত্রা এখন কী করছেন? সরকারি চাকরি করছেন কি না? তাতেই সুমিত্রা বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি চাকরি কোথায়! শ্বশুরবাড়িতে ঘরকন্নার কাজ করি।’’ সুমিত্রার উত্তর হিন্দি এবং ইংরেজিতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিকে জানান জেলার আধিকারিকেরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এক দশক আগেও নাবালিকা বিয়ের হার ছিল বেশি। সরকারি সচেতনতা এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই হার কমেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবাদে বেড়েছে নারী শিক্ষার হারও। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্কুল হল পঁচেটগড় হাইস্কুল। সেখানে শতাংশের নিরিখে উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। আর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে কলেজেও ভর্তি হন অধিকাংশ ছাত্রী। ডিগ্রিও মেলে। কিন্তু তার পর!
ওই গ্রামে হাজার খানেক মানুষের বাস। হাতে গোনা কয়েক জনই সরকারি চাকরি করেন। সুমিত্রাদের মতো অনেকেই সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে ‘গৃহকর্মে নিপুণ’ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালান। সরকারি চাকরি না হয় নেই। বেসরকারি চাকরি আছে কি? স্থানীয়দের বক্তব্য, তা যদি থাকত তবে কি অধিকাংশ যুবক-যুবতীই উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ পাশ করে কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিতেন! পুরুষোত্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা অরুণ বেরা (নাম পরিবর্তিত) বলছেন, ‘‘পড়াশোনা করেও সরকারি চাকরি পাইনি। যাঁদের ঘুষ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা চাকরি পাচ্ছে।’’ সুস্মিতা মোহান্তি, রাখি মণ্ডলের মতো ছাত্রীদের কথায়, ‘‘রাজ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ তেমন নেই। স্কুলগুলিতে নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগও তো হচ্ছে না।’’
স্থানীয়েরা বলছেন, চাকরি নেই। তবে আছে রাজনীতি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল কাটমানি ও সিন্ডিকেটে আজ কোনও সরকারি চাকরি নেই। শিক্ষিত যুবক যুবতীদের পঙ্গু করে দিয়েছে তৃণমূলের সরকার।’’ যদিও তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলছেন,
‘‘রাজ্য সরকার শিক্ষিতদের জন্য সরকারি চাকরির প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী সেখানে ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছেন। আগামী দিনে শিক্ষক পদেও নিয়োগ করার প্রক্রিয়া চলছে।’’