শনিবারও সাগরে স্নান সারলেন বহু পুণ্যার্থী। নিজস্ব চিত্র
‘গঙ্গা মাইয়া’কে প্রণাম সেরে সাগরে ডুব দিয়ে উঠলেন বিহারের বাসিন্দা সন্তোষ পাঠক। জানালেন, স্নানের ‘পুণ্য মুহূর্ত’ ছিল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তাই এদিনই সারলেন স্নান। কিন্তু প্রশাসন যে জলে নামতে বারণ করছে মাইকে। কপালে হাত ঠেকিয়ে সন্তোষ জানালেন, এত দূর থেকে যে কারণে আসা, সেটা না সেরে কি ফেরা যায়! প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। তাঁদের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে স্নানের গুরুত্ব ঢের বেশি।
মকর সংক্রান্তির ভোরে লক্ষ লোকের যে ভিড়টা নেমে পড়েছিল সাগরে স্নান সারতে, শনিবার সে তুলনায় ভিড় ছিল কম। তবে এদিনও বহু মানুষ পুণ্যস্নান সারেন। পুণ্যার্থীদের কোভিড বিধি মানাতে এ ক’দিন বিস্তর ঘাম ছুটেছে পুলিশ-প্রশাসনের। তাতে কতটা কাজ হয়েছে, সে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। এদিনও মাইকে নাগাড়ে বেজে গিয়েছে কোভিড সতর্কতার বিধিনিষেধ।
এরই মধ্যে ফিরে গিয়েছেন আদালতের গড়ে দেওয়া নজরদার কমিটির দুই সদস্য। তুলনায় আরও ঢিলেঢালা লেগেছে প্রশাসনের ভূমিকা।
শনিবার সকালে সমুদ্রে নেমে তর্পণ সেরে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। ভিন্ রাজ্যের বহু পুণ্যার্থী সাগর-স্নান সেরে কপিলমুনি মন্দিরে পুজো দিয়ে এদিনই ফিরতি পথ ধরেন। কচুবেড়িয়া, লট ৮ ঘাটে গাদাগাদি ভিড় চোখে পড়েছে। প্রশাসনকে ভিড় সামলাতে বিশেষ গা লাগাতে দেখা যায়নি।
সরকারি ভাবে আজ, রবিবার শেষ হবে মেলা। শনিবার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ সাফ করতে নেমে পড়েন প্রায় ৭০০০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আগামী ১০ দিন ধরে সাফাই অভিযান চলবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। ঝাড়ু হাতে এদিন সমুদ্রসৈকতে নেমে পড়েছিলেন দুই মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা ও পুলক রায়। জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারাও ছিলেন। স্থানীয় বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, “প্রচুর পুণ্যার্থী মেলায় এসেছেন। মেলা শুরুর আগে আমরা বলেছিলাম, সমুদ্রতট আগের মতো পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হবে। সেই কাজ শুরু হয়েছে।’’ এ বার মেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই মতো কাউকে প্লাস্টিক নিয়ে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি প্রশাসনের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ৭ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ই-দর্শন করেছেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ। ই-স্নান সেরেছেন ২,৮৮,৯৬০ পুণ্যার্থী। ই-পুজোয় যোগ দেন ১,১৯,৬৬২ জন। পুলিশ জানিয়েছে, এ বছর মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন কারণে ৮৬ জনকে আটক করা হয়েছে। মেলায় যাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে উদ্ধার করা গিয়েছে। এ বছর মেলায় ১৫,০০০ পুলিশ কর্মী, ৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, ৩,৫০০ স্যানিটাইজ়েশন কর্মী, ৩,১০০ জনস্বাস্থ্য কর্মী, ২,২০০ সিভিল ডিফেন্স কর্মী, ৮০০ সাগর-বন্ধু, ৩০০ জলপ্রহরী, ৭৫ জন জলসাথী কাজ করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা পুণ্যার্থী সুভাষচন্দ্র আর্যরিয়া এ দিন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।