নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে সাগরে স্নান করছেন পুণ্যার্থীরা। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
কপিলমুনির মন্দিরের ভিতরে দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হলেও সাগরমেলা প্রাঙ্গণে ভিড়ের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ উঠছে। মাস্ক পরার কড়াকড়ি এবং দূরত্ব-বিধি পালনও বহু ক্ষেত্রে শিকেয় উঠেছে। লেগেই রয়েছে ছোট-বড় জটলা-জমায়েত।
সব মিলিয়ে সাগরমেলার প্রস্তুতি দেখে কলকাতা হাই কোর্টের গড়ে দেওয়া দুই সদস্যের কমিটি অসন্তুষ্ট এবং সেটা জানা গিয়েছে প্রশাসনিক সূত্রেই। প্রশাসনিক মহলের খবর, বুধবার মেলা-প্রাঙ্গণ পরিদর্শনের সময় পদে পদে বিধি লঙ্ঘনের নমুনা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে নজরদার কমিটিকে। প্রাক্তন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য-সচিব রাজু মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গড়া ওই কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে জমা পড়েছে বুধবার রাতেই। কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কোর্টেও জমা পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
প্রশাসনের শীর্ষ মহলের খবর, মেলার মাঠে পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সামগ্রিক অনুপস্থিতিও কমিটির নজরে এসেছে। তবে গোটা পুলিশি ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা যে সাগরদ্বীপে রয়েছেন, তা নজরদার কমিটিকে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের আশা, কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ত্রুটি শুধরে নেওয়ায় এ-যাত্রায় সরকারি কর্তারা আদালতের কোপে না-ও পড়তে পারেন।
করোনার তৃতীয় তরঙ্গের প্রবল প্রকোপের মোকাবিলায় এ বার সাগরমেলা বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। উচ্চ আদালত অতিমারি বিধি-সহ কয়েকটি শর্তে মেলা করা যাবে বলে জানায়। গঙ্গাসাগর মেলা নির্দেশিত বিধি মেনে হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে নজরদারি চালাতে দুই সদস্যের কমিটি নিয়োগ করেছে হাই কোর্ট। যাবতীয় শর্ত পালনের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে দায়বদ্ধ করা হয় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। আদালতের নির্দেশ, নিয়মবিধি লঙ্ঘিত হতে দেখলে মেলা বন্ধের সুপারিশও করতে পারে ওই কমিটি। তবে তেমন কোনও সুপারিশ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়নি বলেই নবান্নের খবর।
গঙ্গাসাগরে এ বার নিয়ম মেনে পুজোপাঠ হলেও জনসমাগম যাতে না-হয়, সেই আর্জি জানিয়েছিলেন মামলাকারী এবং চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যেরা। হাই কোর্ট অবশ্য সাগরে সমাগম নিষিদ্ধ করেনি। তার বদলে কিছু শর্ত আরোপের সঙ্গে সঙ্গে ওই নজরদার কমিটি নিয়োগ করে। আদালত যে-সব শর্ত পালন করতে বলেছে, গঙ্গাসাগরের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষের মেলায় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে আমজনতার পাশাপাশি চিকিৎসক মহলেও প্রশ্ন রয়েছে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের দাবি, বুধবার মেলা পরিদর্শনের সময়েই নজরদার কমিটিকে বিভিন্ন বিষয়ে কার্যত অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল। তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সব শর্ত বা বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়নি। তবে আইনজীবী মহলের ব্যাখ্যা, ওই কমিটিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করার ছাড়পত্র দিয়েছে কোর্ট। তাই কোনও ক্ষেত্রে অখুশি হলে রাজ্য সরকারকে তা শুধরে নেওয়ার পরামর্শও দিতে পারে কমিটি।
রাজ্য প্রশাসনের একটি মহলের দাবি, প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে এ দিন থেকে প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে। মাস্ক পরার কড়াকড়ির পাশাপাশি ভিড় ঠেকাতে আগের থেকে বেশি কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, নজরদার কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক ত্রুটি শুধরে নেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখতে পরিদর্শন হয়েছে এ দিনেও।