Health Department

‘বিশেষ’ ওষুধ মিলবে না গ্রামীণ হাসপাতালে

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৮ সাল থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫৩ ধরনের ওষুধ মিলত। তা বাড়িয়ে ৭৪ করা হচ্ছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

সব ওষুধ সব চিকিৎসা কেন্দ্রে মিলবে না। ‘জরুরি’ এবং ‘বিশেষ’— ওষুধের তালিকাকে ভাগ করা হয়েছে এই দু’ভাগে। ‘বিশেষ’ তালিকাভুক্ত ওষুধ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ‘বিশেষ’ ওষুধ মিলবে অল্প কিছু। বেশির ভাগ ‘বিশেষ’ ওষুধ মিলবে মেডিক্যাল কলেজ স্তরে। কোনও একটি রোগের একই গোত্রের ওষুধের একাধিক মলিকিউল না-কিনে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এ বার থেকে একটি মলিকিউল বেছে নেবে।

Advertisement

সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওষুধের তালিকা রদবদল করা হচ্ছে এ ভাবেই। একেবারে প্রাথমিক চিকিৎসার স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত ওষুধের তালিকায় কোথাও ওষুধ বাড়ছে, আবার কোথাও কমছে।

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হেল্‌থ ওয়েলনেস সেন্টারগুলিতে ওষুধের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে ঠিকই। তবে সেখানে ক্যানসার, রক্ত বা স্নায়ুর জটিল অসুখ, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ প্রভৃতি ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ চিকিৎসার ওষুধ থাকবে না বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। কেন থাকবে না? কারণ, সেখানে এই ধরনের চিকিৎসার পরিকাঠামো ও চিকিৎসক নেই।

Advertisement

ওষুধের তালিকায় রদবদলের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবরে। তখন এর জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও তৈরি করে স্বাস্থ্য দফতর। সেই কমিটি তামিলনাড়ুর মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের ওষুধ-নীতিকে মডেল করে পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। তখন সরকার হাসপাতালে ওষুধ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছিল। ঠিক চার বছরের মাথায় সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে স্বাস্থ্য দফতর। এ-পর্যন্ত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত ওষুধের তালিকা ঠিক করেছে তারা। তার পরের স্তরের তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৮ সাল থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫৩ ধরনের ওষুধ মিলত। তা বাড়িয়ে ৭৪ করা হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হেল্‌থ ওয়েলনেস সেন্টারে ওষুধের সংখ্যা ৫৫ থেকে বেড়ে হচ্ছে ৯৯। এই স্তরে বেশ কিছু ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’ যেমন হাইপারটেনশন, রক্তচাপ, থাইরয়েড প্রভৃতির ওষুধ ও মনোরোগের ওষুধ রাখা হচ্ছে, যা এত দিন থাকত না।

ওষুধের সংখ্য কমে যাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আগে সেখানে ২২৯ ধরনের ওষুধ পাওয়া যেত। অতঃপর শয্যাহীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৯ এবং শয্যাযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৮৬ ধরনের ওষুধ মিলবে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালে এত দিন ২৭১ ধরনের ওষুধ মিলত। এ বার সেখানেও সংখ্যাটা কমে হবে ২৬৭।

তামিলনাড়ুতে ‘জরুরি’ তালিকায় রয়েছে ৩০৫ ধরনের ওষুধ, ‘বিশেষ’ তালিকায় ৪১৫টি। সব মিলিয়ে আছে ৭২০ ধরনের ওষুধ। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি তালিকায় ছিল প্রায় ১৮০০ ওষুধ! তা কমানোর কাজ শুরু হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এত দিন একই গোত্রেরই একাধিক ওষুধ ছিল। একই হাসপাতালে একই রোগে এক-এক জন চিকিৎসক ইচ্ছামতো এক-এক গোত্রের ওষুধ লিখতেন। সব ওষুধ সমান পরিমাণে সর্বত্র মজুত রাখা অসম্ভব। ফলে অনেক রোগী হাসপাতালে হয়তো সেই বিশেষ গোত্রের ওষুধ পেতেন না। তখন তাঁকে বাইরে থেকে কিনতে হত। এই ব্যবস্থা আমরা বদলাতে চাইছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, যে-রোগ যে-ওষুধে কম খরচে সব চেয়ে ভাল সারে, সেটাই বেছে নিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বাকিগুলো বাদ দিয়েছে। এতে রোগীর কোনও সমস্যা হবে না। ওষুধ সংস্থাগুলির মুনাফায় টান পড়তে পারে। তারা অসন্তুষ্ট হতে পারে।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, ২০১২ সালে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে নিখরচায় ওষুধ দেওয়া শুরু হয়েছিল। ২০১৫ থেকে তা চালু হয় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। অনেকের অভিযোগ, লক্ষ্মীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্প চালাতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। তাই সরকারি ওষুধের তালিকায় কাটছাঁট চলছে। সেই তত্ত্ব খণ্ডন করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement