Fraud Call

করমণ্ডল দুর্ঘটনার সুযোগ নিয়ে ফোনে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির চক্র, টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় প্রতারকরা

ফোনে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ অনেক। এ বার করমণ্ডল এক্সপ্রসের দুর্ঘটনাকে হাতিয়ার করে নতুন ছক কষেছে প্রতারকেরা। হাতেনাতে প্রমাণ পেল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ১৬:০৭
Share:

নতুন ফন্দি প্রতারকদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আপনি কি দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন? কোনও চোট-আঘাত না থাকলেও ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। নিজের মোবাইল ফোন থেকে সামান্য কয়েকটি কাজ করতে হবে। তা হলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ঢুকে যাবে। এমন প্রস্তাব পেলে সাবধান! টাকা ঢোকার বদলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। কারণ, বালেশ্বরের দুর্ঘটনার পর পরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র।

Advertisement

এমনই ফোন পেয়েছেন বাগনানের বাসিন্দা দুর্লভ মিত্র (নাম পরিবর্তিত)। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানান, এক ব্যক্তি ফোন করে তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন? দুর্লভ ‘হ্যাঁ’ বলায় ও পার থেকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও আঘাত কি লেগেছিল? তিনি ‘না’ বলায় আসে ‘প্রস্তাব’। একটি ফোন নম্বরে ডিজিটাল মাধ্যমে আধার কার্ডের ছবি এবং ১,৫০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। সে সব মিলে গেলেই সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা ওড়িশা সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ ঢুকে যাবে।

প্রথমে বিশ্বাস করে ফেললেও পরে কিছুটা সন্দেহ হয়। নাম, পরিচয় জানতে চাইলে ও পার থেকে বলা হয়, তিনি ওড়িশা সরকারের অফিসার। দ্রুত টাকা ও নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়ে কেটেও দেওয়া হয় ফোন। পরে আবার ফোন করে নথি ও টাকার জন্য তাড়া দেওয়া হয়। যদিও বিষয়টা সঠিক নয় বুঝে তিনি টাকা না পাঠিয়ে বিস্তারিত জানান আনন্দবাজার অনলাইনকে। সঙ্গে গোটা কথোপকথনের ‘কল রেকর্ড’ও পাঠান।

Advertisement

এর পরে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ওই নম্বরে (৯৬৩৫০৪০৮৩৫) ফোন করা হয়। বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় যোগাযোগ করা যায়। প্রথমে টানা ‘ব্যস্ত’ দেখালেও পরে এক মহিলা ফোন ধরেন। তাঁকে জানানো হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এক যাত্রী পায়ে চোট পেয়েছেন। তাঁর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যাবে কি? এর পরেই ফোনে কথা বলতে শুরু করেন এক ব্যক্তি। নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মী। নাম, স্বপনকুমার মিশ্র। তিনি ওড়িশা থেকে কথা বলছেন জানালেও একেবারে ঝরঝরে বাংলায় জানান পদ্ধতি। দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়ার প্রমাণ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র লাগবে কি না জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট বলে দেন, ‘‘ও সব কিচ্ছু লাগবে না। যা যা বলছি করুন, তা হলেই রেলের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা এখনই পেয়ে যাবেন।’’

এ বার শুরু হয় পদ্ধতি বলার পালা। প্রথমেই চলে যেতে বলেন গুগ্‌ল প্লে স্টোরে। সেখানে ইংরেজি বড় অক্ষরে এএনওয়াইডিআএসকে (ANYDESK) লিখতে বলেন। জানান, একটি অ্যাপ আসবে। সেটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে বলেন। করা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘‘ওখানে একটি নয় সংখ্যার নম্বর দেখা যাচ্ছে সেটা জানাতে হবে।’’ জানানোর পরে রেজিস্ট্রেশনের জন্য এক টাকা পাঠাতে হবে। তার পরেই ৫০ হাজার টাকা ঢুকে যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

নিজেকে স্বপনকুমার মিশ্র বলে দাবি করা ওই ব্যক্তির কথা মতো গুগ্‌ল প্লে স্টোরে টাইপ করলে দেখা যায় একটি অ্যাপ্লিকেশন এসেছে যার নাম ‘এনি ডেস্ক রিমোট ডেস্কটপ’। প্রসঙ্গত, এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন খুবই বিপজ্জনক। কোনও মোবাইল ফোনে তা রাখলে এবং তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর অন্য কাউকে জানালেই বিপদ। কারণ, ওই ব্যক্তি যদি নিজের ফোনে ওই নম্বর দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনটি খোলেন তবে তিনি এ দিকের ফোনে যা যা করা হবে সব সরাসরি দেখতে পাবেন। এখানেই কারসাজি। কারণ, ফোনে এক টাকা পাঠালেও পিন দিতে হয়, ওটিপি দিতে হয়। আর সে সব জেনে গেলে ও পার থেকে এ পারের মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণ করে মুহূর্তের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দেওয়া যায়। সেটাই চেষ্টা করেছিলেন স্বপনকুমার মিশ্র নামের দাবিদার।

কিন্তু এ পার থেকে যে নয় সংখ্যার নম্বর (কল্পিত) বলা হয়, তা দিয়ে তিনি যখন দেখেন কোনও কাজ হচ্ছে না তখনই তিনি কিছুটা আঁচ পান। এর পরে পরিচয় জানাতেই ফোন কেটে দেন। এখনও সেই ফোন বন্ধ।

ফোনে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার যে প্রতারক চক্র কাজ করছে তারা এখন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাকে কাজে লাগাতে চাইছেন। তাই সাবধান। পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়, এই ধরনের ফোন এলে তাতে সাড়া না দেওয়ার জন্য। কারণ নতুন নতুন প্রলোভন নিয়ে হাজির হয় প্রতারকেরা। এখন দুর্ঘটনাকে ব্যবহার করেও এই কাজ শুরু হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পরে রেলের পক্ষে যাত্রীদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। সেখান থেকে নম্বর নিয়েই এই প্রতারণার চেষ্টা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement