মুখ্যমন্ত্রীর অধিগ্রহণের হুঁশিয়ারির পর বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় প্রায় চার হাজার বেসরকারি বাস পথে নামল। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পর রাস্তায় বাড়ল বেসরকারি বাস-মিনিবাসের সংখ্যা। যদিও ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে এখনও অনড় মালিকপক্ষ। বৃহস্পতিবার পরিবহণ দফতরে ফের এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলি। ভাড়া বৃদ্ধির দাবি পুর্নবিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার পর ভাড়া বাড়ানো-সহ একাধিক দাবিতে গত সোমবার থেকে গাড়ি তুলে নিয়েছিলেন বাসমালিকদের একাংশ। বৃহত্তর কলকাতায় হাতে গোনা বেসরকারি বাস চলছিল। তার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছিল যাত্রীদের। প্রয়োজনে বেসরকারি বাস-মিনিবাস অধিগ্রহণ করে চালানো হবে— মুখ্যমন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারির পর বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় প্রায় চার হাজার বেসরকারি বাস পথে নামে। তবে, কয়েকটি রুটে বাস না নামার কারণে যাত্রী ভোগান্তির ছবিও কোথাও কোথাও ধরা পড়েছে।
এ দিন উল্টোডাঙা থেকে ইএম বাইপাস, পাটুলি থেকে বিমানবন্দর— সর্বত্রই বাসের সংখ্যা ছিল বেশি। গত কয়েক দিনের চেনা ভোগান্তির ছবি ধরা পড়েনি। রাস্তায় নেমেছে মিনিবাসও। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা ৪৫ নম্বর রুটের বাসও চলতে দেখা গিয়েছে এ দিন। পুরনো ভাড়াতেই বহু রুটে বাস ফের চালু হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, “এ দিন শহরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ সরকারি এবং ৩ হাজার ৮০০ বেসরকারি বাস চলছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।”
এ দিন উল্টোডাঙা থেকে ইএম বাইপাস, পাটুলি থেকে বিমানবন্দর— সর্বত্রই বাসের সংখ্যা ছিল বেশি
বেসরকারি বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলি বুধবার পরিবহণ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিল, জট খুলছে। তবে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি থেকে তারা সরছে না। এ দিন পরিবহণ দফতরে দুপুরে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, ভাড়া বাড়াতে হবে। তার পাশাপাশি ট্যাক্স, পারমিট, সিএফ, জরিমানা মকুব করার দাবিও জানানো হয়। বিমা মকুবেরও আবেদন জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির পক্ষ থেকেও এ দিন চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে তাদের দাবির বিষয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, তাদের সংগঠনের অধীনে রাজ্যে ২৭ হাজার বাস-মিনিবাস রয়েছে। তার মধ্যে ৬ হাজার গাড়িকে বেছে নিয়ে অনুদানের জন্য চিন্থিত করা প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে ভাড়া বাড়ানোই একমাত্র পথ বলে জানানো হয়েছে ওই সংগঠনের তরফে।
যদিও করোনা আবহে প্রথম থেকে পরিবহণমন্ত্রী ভাড়া না বাড়িয়ে কী ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায়, তারই চেষ্টা করেছেন। মালিকপক্ষের আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ৬ হাজার বেসরকারি বাস-মিনিবাসকে আগামী তিন মাস ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও জানান। কিন্তু সরকারি এই অনুদানকে বিভাজনের তকমা দিয়ে বেঁকে বসেন মালিকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: এক সফরে দুই বার্তা দিতে রাজনাথ কাল লাদাখে
এর পরে ফের আসরে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। যাত্রী স্বার্থে তিনি কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। দু’এক দিনের মধ্যে রাস্তায় বাস না নামালে, সেগুলি অধিগ্রহণ করা হবে বলে জানান। প্রয়োজনে চালক দিয়ে সরকার বাস চালানো হবে বলেও স্পষ্ট বার্তাও দেন সংগঠনগুলির উদ্দেশে। এর পরই গতকাল পরিবহণ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলি। বৈঠকের প্রথম থেকেই সুর নরম ছিল সংগঠনকর্তাদের। দাবি-দাওয়া তুলে ধরলেও, তাঁরা যে বাস চালাতে চান, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিল সংগঠনগুলি। এ দিন সেই ছবিই ধরা পড়েছে কলকাতার সর্বত্র। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে পরিবহণ দফতরের।