মৃত এক শিশুর বাবা-মা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে উত্তরবঙ্গে শিশুমৃত্যু চলছেই। রবিবার এক বালককে নিয়ে আরও চার শিশুর মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গে। তার মধ্যে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন শিশু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিল। এই নিয়ে গত ১২ দিনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৯ জন শিশুর মৃত্যু হল। যদিও কয়েক দিন আগে একটি শিশুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, এ দিন সকালে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মেডিক্যালে তিন দিনের একটি সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন উপসর্গের এই পর্যায়ে গত কয়েক দিনে উত্তরবঙ্গে এ পর্যন্ত ২৫টি শিশু মারা গিয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রের দাবি। যদিও এই পরিসংখ্যান মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মৃত ১১ বছরের বালকটির নাম সহিদুল হক। বাড়ি শিলিগুড়ির প্রধাননগরের রামকৃষ্ণনগরে। এক মাস ২৫ দিন বয়সি অয়ন বিশ্বাসের পরিবার থাকে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে। আট মাসের নিখাত পারভিনের পরিবার শিলিগুড়ির ফুলবাড়ির বাসিন্দা।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর রাতে মারা গিয়েছে অয়ন এবং সহিদুল। পরে বেলা ১১টা নাগাদ মারা যায় নিখাত। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কোনও একটি কারণে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, ব্যাপারটা তা নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ মাসের যে শিশুটি মারা গিয়েছে তার সেপ্টিসিমিয়া ছিল। সেই সঙ্গে সেপটিক শক ও রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। ১ মাস ২৫ দিনের শিশুটিকে জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাঁচানো যায়নি। তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখা হয়নি। ১১ বছরের শিশুটি কী কারণে মারা গিয়েছে, সেই তথ্য এখনও পাইনি।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘আশার কথা, কার্শিয়াং থেকে ২৩ এবং ২৪ সেপ্টেম্বর করোনা পজ়িটিভ যে তিন শিশুকে ভর্তি করানো হয়েছিল তাদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।’’
রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ দিন এক শিশুর মৃত্যু হয়। গত বৃহস্পতিবার কালিয়াগঞ্জের আটঘরা এলাকার বাসিন্দা পম্পি কর্মকার শিশুটির জন্ম দেন কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরিবারের দাবি, শিশুটির জ্বর, জন্ডিসের আক্রান্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। শনিবার রায়গঞ্জ মে়ডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায়ের অবশ্য বক্তব্য, “মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে তিনদিন বয়সি ওই শিশুটি মারা গিয়েছে।”
এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অন্তত ২০ জনকে দুপুর পর্যন্ত ভর্তি করানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৩টি শিশু ভর্তি রয়েছে। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের ৫৪ এবং ইসলামপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ৩৭টি শিশু ভর্তি রয়েছে।
অন্য দিকে, পশ্চিম বর্ধমানে জ্বর-সর্দি নিয়ে চিকিৎসাধীন তিন শিশুর শরীরে করোনা সংক্রমণ মিলেছে। রবিবার এই খবর দিয়ে জেলার সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক কেকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আসানসোল জেলা হাসপাতালে একশোটিরও বেশি এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৫০টি শিশুর কোভিড পরীক্ষা হয়েছিল। দুর্গাপুরে তিন শিশুর রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাদের শারীরিক অবস্থা এই মুহূর্তে স্থিতিশীল।”