রাজ্যে অব্যাহত শিশু মৃত্যু। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে শিশু মৃত্যু অব্যাহত। বিসি রায় শিশু হাসপাতালেই রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চারটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকারের নবগঠিত টাস্ক ফোর্স এ দিন সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই)-এ আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট বিধি তৈরি করা হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ দিন পর্যন্ত জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ১২,৩৪৩ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের জেরে মারা গিয়েছে ১৯ জন। তাদের মধ্যে ১৩ জনেরই প্রবল আনুষঙ্গিক অসুস্থতা ছিল। তিন জনের অত্যধিক কম ওজন ছিল, দু’জনের জন্মগত ফুসফুসের অসুখ, তিন জনের জন্মগত হার্টের রোগ ছিল। জন্মগত বিপাকজনিত সমস্যা ও ‘মাসকুলার ডিস্ট্রফি’র মতো জিনঘটিত অসুখ ছিল আরও চার জনের। এবং এক জনের ছিল অন্য আনুষঙ্গিক অসুস্থতা। যদিও বেসরকারি সূত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫০-র কাছাকাছি।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, কয়েক দিন আগেও দৈনিক যেখানে ৮০০ শিশু ভর্তি হচ্ছিল, তা ৬০০-র আশেপাশে নেমেছে। এ দিনের হিসেবে বলা হয়েছে, রাজ্যে ৫ হাজার পেডিয়াট্রিক শয্যার মধ্যে ভর্তি রয়েছে ২,৭৬৩টি। ৬৫৪টি পিকু শয্যার মধ্যে ২৬৫টি, নিকুর ২২৩টির মধ্যে ১৭৫টি, এসএনসিইউ-র ১৭৪৮টির মধ্যে ১২১১টি ভর্তি রয়েছে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে স্থির হয়েছে, অযথা ‘রেফার’ করা কমাতেই হবে। না হলে শহরের হাসপাতালে শিশু মৃত্যু কমানো সম্ভব হবে না। স্থানীয় স্তরে মেডিক্যাল কলেজ বা অন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে হবে চিকিৎসার জন্য। এক কর্তার কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্টে অক্সিজেন থেরাপি স্থানীয় স্তরে দেওয়া সম্ভব। দরকারে টেলি-মেডিসিনের সুবিধা নিতে হবে।’’ জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করার কাজে আশাকর্মীদের আরও বেশি ব্যবহার করা, সচেতনতার প্রসারে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকেও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। বয়স্করাও এআরআই-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই জেলা ও মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে ‘সারি’ (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) ওয়ার্ডগুলির পরিকাঠামোও প্রস্তুত রাখতে হবে। মঙ্গলবার বিকেলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসবে স্বাস্থ্য কমিশন। খতিয়ে দেখা হবে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুতি রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে বলে জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়াও। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস(এইচ ১ এন ১ এবং এইচ ৩ এন ২)-এর প্রজাতি মাথাচাড়া দেওয়ার পিছনে মূল ভাইরাসের চরিত্র পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন তিনি।
রাজ্যে শিশু মৃত্যু প্রসঙ্গে মাণ্ডবিয়া আজ দিল্লিতে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কিছু শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। বৈঠক হয়েছে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে। মাঝে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি (শিশু মৃত্যু) বেশ উদ্বেগজনক জায়গায় চলে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, স্বাস্থ্য যে হেতু রাজ্যের বিষয়, তাই রাজ্য সাহায্য না চাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র সরাসরি তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।